‘খাবার চাইলেই হাত-পা বেঁধে রেখে পেটানো হতো’

খালা শুকুরজানের সঙ্গে রাসেল শেখ। শনিবার সকালে গোয়ালন্দ ঘাট থানা চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় এক তরুণকে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের বাড়িতে এক সপ্তাহ ধরে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা চুরির অভিযোগে তাঁকে আটকে রাখা হয় বলে জানা গেছে।

পরে স্থানীয় বাসিন্দারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে গতকাল শুক্রবার রাতে ওই তরুণকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তরুণের নাম রাসেল শেখ (১৯)। তিনি উপজেলার দক্ষিণ দৌলতদিয়া সৈদালপাড়ার নজরুল শেখের ছেলে। আর অভিযুক্ত উসমান কাজী দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। রাসেলকে উদ্ধারের সময় পুলিশ উসমানের ছোট ভাই মুকবুল কাজীকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে।

এ ঘটনায় আজ শনিবার রাসেলের খালা শুকুরজান বাদী হয়ে ইউপি সদস্যসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। অভিযুক্ত উসমান কাজী পলাতক।

পুলিশ ও উদ্ধার হওয়া তরুণের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাসেলের বাবা মানসিকপ্রতিবন্ধী। তাঁর মা সৌদি আরবে থাকেন। রাসেল ঢাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রায় তিন মাস আগে একই গ্রামের সোনামুদ্দিন ফকিরের একটি অটোরিকশা চুরি হয়। এ ঘটনায় সোনামুদ্দিন রাসেলকে সন্দেহ করেন। রাসেল এলাকায় থাকায় সোনামুদ্দিনের লোকজন তাঁকে আটক করে মারধরের পর জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করেন। ২০ দিন আগে সোনামুদ্দিনের আরেকটি অটোরিকশা চুরি হয়। এবারও তিনি রাসেলকে সন্দেহ করেন।

রাসেল শেখ জানান, অটোরিকশা চুরির ঘটনার বিচারের জন্য ২০ নভেম্বর দুপুরে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সালিস বসে। ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ প্রামাণিকসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রাসেল ভয়ে চুরির সঙ্গে তাঁর মামা মঞ্জু ফকিরসহ খালাতো ভাইদের জড়িত থাকার কথা বলেন। অপমানিত বোধ করায় তাঁর মামা সালিস বৈঠকে অচেতন হয়ে পড়লে ২৭ নভেম্বর পুনরায় সালিসের দিন নির্ধারণ করা হয়। এর আগপর্যন্ত রাসেলকে ইউপি সদস্য উসমান কাজীর নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত দেন চেয়ারম্যান। এর পর থেকে উসমান কাজীর একটি ঘরে রাসেলকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। উসমানের দুই ভাই মুকবুল, আসাদ কাজীসহ অন্যরা তাঁকে পাহারা দিতেন।

রাসেল বলেন, ‘আমি কোনো দিন মারামারি করিনি, কারও একটি টাকাও মেরে খাইনি। এরপরও আমাকে অমানবিক নির্যাতন করেছে। খাবার চাইলে তারা হাত-পা বেঁধে পেটাত।’ গতকাল বিকেলে রাসেলের খালা শুকুরজান ওই বাড়িতে যান। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় বিষয়টি ৯৯৯-এ ফোন করে জানালে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ রাসেলকে উদ্ধার করে।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান জানান, এ কয়েক দিন রাসেলকে কোথায় আটকে রাখা হয়েছিল, তা তাঁর জানা নেই। তিনি কাউকে আটকে রাখার নির্দেশও দেননি।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, উসমান কাজীর বাড়িতে গিয়ে মুকবুল কাজীকে আটক করা হয়। পরে তাঁর কাছে থেকে তালাবদ্ধ ঘরের চাবি নিয়ে রাসেলকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।