খাবার পানির সংকটে ৪৬ গ্রাম

বিশুদ্ধ পানির উৎসের বেশির ভাগই অকেজো। ফলে শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির সংকটে পড়ছেন বাসিন্দারা।

খাবার পানির তীব্র সংকট। তাই সরকারি উদ্যোগে স্বল্প দামে বিক্রি করা হচ্ছে সুপেয় পানি। সম্প্রতি বরগুনার পাথরঘাটার ইউএনওর বাসভবনের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ৪৬টি গ্রামে খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, গ্রামগুলোর বিশুদ্ধ পানির উৎসের বেশির ভাগই অকেজো। ফলে কয়েক বছর ধরেই তাঁরা শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির সংকটে পড়ছেন। বারবার জানালেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সুপেয় পানির বেশি সংকট উপজেলার ২৫টি গ্রামে। এগুলো হলো উত্তর চরদুয়ানী, দক্ষিণ চরদুয়ানী, গাব্বাড়িয়া, তাফালবাড়িয়া ইকরবুনিয়া, কালিয়ারখাল, চরলাঠিমারা, বাদুরতলা, পদ্মা, রূহিতা, বড় টেংরা, হাজির খাল, ছোট পাথরঘাটা, ঘুটাবাছা, লাকুরতলা, ছোনবুনিয়া, উত্তর কাঁঠালতলী, পরিঘাটা, বকুলতলা, তালুক চরদুয়ানী, কালীবাড়ী, নাচনাপাড়া, ছোট নাচনাপাড়া, মানিকখালী ও উত্তর জ্ঞানপাড়া। এর বাইরে উপজেলার আরও ২১টি গ্রামের বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির মাঝারি মাত্রার সংকট রয়েছে।

চরলাঠিমারা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, স্থানীয় হরিণঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন পুকুরে সৌরশক্তিচালিত দুটি পানির ফিল্টার আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো নষ্ট হয়ে রয়েছে। ফলে এই এলাকার মানুষ ওই পুকুরের পানি পরিশোধন ছাড়াই পান করছে। বিষয়টি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে একাধিকবার জানানো হয়েছে, কিন্তু তারা ফিল্টার মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

ওই ৪৬ গ্রামে সুপেয় পানিসংকটের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরতে সম্প্রতি পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন এলাকাবাসী। তাঁদের সহযোগিতা করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উপজেলার ওই ৪৬ গ্রামে সুপেয় পানির উৎসগুলোর ৬০ শতাংশই এখন অকেজো। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

পাথরঘাটায় সুশীলনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে তাঁরা উপজেলায় সুপেয় পানির প্রাপ্যতার ওপরে জরিপ চালিয়েছেন। সে মোতাবেক পাথরঘাটা পৌরসভাসহ চরদুয়ানী ইউনিয়ন, পাথরঘাটা সদর, কালমেঘা, কাঁঠালতলী ও নাচনাপাড়া ইউনিয়নের ৪৬টি গ্রামে সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি গ্রামে তীব্র সংকট আর বাকি ২১টি গ্রামে মাঝারি সংকট দেখতে পেয়েছেন জরিপকারীরা।

সুপেয় পানির সংকট নিরসনের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা সরব হয়েছেন। তাঁরা মাস দুয়েক আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাতে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে ৮ দফা করণীয় তুলে ধরেছেন তাঁরা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, তিন দিকে নদী থাকায় পাথরঘাটায় শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যায়। সমাধান হতে পারত গভীর নলকূপ বসানো, কিন্তু তাতে বাদ সাধছে মাটির বৈশিষ্ট্য। এখানে ভূপৃষ্ঠের নিচে বড় বড় পাথরের অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে গভীর নলকূপ বসানো যায় না। সমস্যা নিরসনে খাসপুকুর তৈরি করে ও অগভীর নলকূপ বসিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে থাকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। অনেক নলকূপ এখন নষ্ট এবং অনেক পুকুরের পানি খাওয়ার অনুপযোগী হওয়ার কথা মানছে অধিদপ্তর। তবে পরিমাণটা ৪১ শতাংশের মতো বলে মনে করে তারা।

পাথরঘাটা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী দোলা মল্লিক বলেন, গভীর নলকূপ না বসার কারণে এবং নদীর তীরবর্তী এলাকা হওয়ায় সুপেয় পানির সংকট তীব্র। উপজেলায় ৪০টি খাসপুকুর খননের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এই কাজ শেষ হলে সুপেয় পানির উৎস বাড়বে। মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সৌরশক্তিচালিত ৭টি ফিল্টার বর্তমানে অচল বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

বরগুনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পাথরঘাটায় সুপেয় পানির সংকট নিরসনে খাসপুকুর খননের চেয়ে এখন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে তাঁরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ বিষয়ে এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি পানির ট্যাংক দেওয়ার কাজ চলছে।