খাল খননে সড়কের সর্বনাশ

সড়কটির বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ছে। তিনটি স্থানে সড়ক পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চলাচলে দুর্ভোগ।

সড়ক ধসে পড়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকার লোকজন। গত বৃহস্পতিবার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার লাইন বিল পাবলায়
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়ায় লাইন বিল পাবলা খাল পুনঃখননের কাজ চলছে। এতে খালপাড়ের সড়কটির বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ছে। তিনটি স্থানে সড়ক পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

ফলে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী। মাড়াই করা ধান বাজারে নিতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

গত বৃহস্পতিবার লাইন বিল পাবলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির এক পাশে ফসলি জমি ও মানুষের বসতবাড়ি, অন্য পাশে খাল। কৃষকেরা বোরো ধান মাড়াই শেষে ঝাড়াই করে বস্তাবন্দীর কাজে ব্যস্ত। খালের মধ্যে বড় একটি খননযন্ত্রের সাহায্যে খননকাজ চলছে। রায়েরমহল স্লুইসগেট থেকে লাইন বিল পাবলা রেলসেতু পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার খনন হয়েছে। খালের দুই পাশের অসংখ্য গাছ খননযন্ত্রের সাহায্যে উপড়ে ফেলা হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়ে ধসে পড়েছে। তিনটি স্থানে পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সড়ক দিয়ে কোনো ভ্যান-ইজিবাইক চলাচল করতে পারছে না। স্থানীয় মানুষ পথ চলতে ভোগান্তিতে পড়ছে। অনেকে সাইকেল কাঁধে নিয়ে ভাঙা অংশ পার হচ্ছেন। সড়কের পাশের বেশ কিছু দোকান, ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় ফাটল ধরেছে।

খননযন্ত্রের চালক নজরুল ইসলাম ও তাঁর সহকারী মোসলেম গাজী বলেন, রাস্তার গোড়া থেকে মাটি খুঁড়ে রাস্তাটি করা হয়েছে। কোনো ঢাল নেই। কাটতে গেলেই ধসে যাচ্ছে।

শহর লাগোয়া গ্রামীণ এ রাস্তা দিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। ৫০টির বেশি ইজিবাইক চলাচল করে। শহরের অনেক মানুষের জমি আছে সেখানকার বিলে। ফলে জমিতে উৎপাদিত ফসল শহরে আনার জন্য পণ্যবাহী ছোট যানও চলাচল করে।

গ্রামের কৃষক সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, মাড়াই-ঝাড়াই শেষে তাঁর প্রায় ৪০০ মণ বোরো ধান বস্তায় ভরে রেখেছেন। রাস্তার কারণে বিক্রির জন্য হাটে নিতে পারেন না। চুরির আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে ভীষণ ঝামেলায় পড়ে গেছেন।

এক্সকাভেটর দিয়ে খাল খনন করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারের ছবি
প্রথম আলো

রাস্তার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশে নেমে সাইকেল আর ঝুড়ি-কলস কাঁধে নিয়ে পার হচ্ছিলেন দুধ বিক্রেতা দীপক বিশ্বাস ও মাছ বিক্রেতা অসীম বিশ্বাস। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের মতো অনেকে গ্রাম থেকে মাছ, দুধ, ডিম কিনে সাইকেলে করে সেগুলো শহরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় আমাদের সময়ও নষ্ট হচ্ছে, আবার দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।’

লাইন বিল পাবলা গ্রামে সুপেয় পানির সংকটও তীব্র। মাত্র দুটি নলকূপের পানিই ভরসা। রাস্তা ভাঙা হওয়ায় নারীদের পানি আনতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। দেবলা বিশ্বাস বলেন, ‘এক কিলোমিটার দূর থেকে সিরিয়াল দিয়ে পানি আনি। জান বাঁচাতি এমনিই জান বেরিয়ে যায় আর রাস্তা ভাঙা হওয়ায় সেই কষ্ট আরও বেড়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা নগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ময়ূর নদের সঙ্গে লাইন বিল পাবলা খালটি সংযুক্ত। বহু বছর ধরে খালটি খনন করা হয় না। প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের মার্চে খালটির ৩ হাজার ৫০ মিটার পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়। চলতি মে মাসের শেষ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। মেসার্স এ এস কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়।

বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে এক কিলোমিটার ধসে গেছে। রাত গেলেই নতুন করে ভাঙছে। এলাকাবাসীর দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
বিনয় সরদার, লাইন বিল পাবলা গ্রামের বাসিন্দা

পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, ভরাট হয়ে যাওয়া খালে পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা, খুলনা শহরের পানি নামার একটি পথ তৈরি, জলাবদ্ধতা দূর করা ও ফসলের খেতে সেচ দেওয়ার জন্য খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছিল পাউবো। তবে খাল খননের সময় রাস্তা ধসে যাচ্ছে। রাস্তাটি খাড়া, কোনো ঢাল

নেই। এ জন্য মাটি ওঠাতে গেলেই ভাঙছে। তবে রাস্তাটি ঠিক করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

লাইন বিল পাবলা গ্রামের বাসিন্দা গুটুদিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বিনয় সরদার ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল শিকদার বলেন, খালপাড়ের রাস্তায় ইট বসানো হয়েছে বছরখানেক হলো। রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বড় বড় খননযন্ত্র বারবার যাতায়াত করছে। এত ভার রাস্তা নিতে পারছে না। আবার খালপাড়ের সব গাছ উপড়ে ফেলায়ও ক্ষতি হয়েছে। আর খালপাড় খাড়াখাড়িভাবে কাটায় পাশের বিভিন্ন স্থাপনাসহ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে এক কিলোমিটার ধসে গেছে। আর তিনটি পয়েন্ট পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রাত গেলেই নতুন করে ভাঙছে। সামনে বর্ষাকাল। এলাকাবাসীর দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

ডুমুরিয়ার ইউএনও আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি, খাল খননের জন্য রাস্তা ধসে গেছে। সড়কের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করতে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। এ জন্য বরাদ্দও করা হয়েছে। এ ছাড়া সঠিকভাবেই পুরো রাস্তাটিও ঠিক করে দেওয়া হবে।’