খাল দখল করে স্থাপনা

উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় জয়নগর খালের অন্তত ৮০ শতাংশ জমি দখল করে আছেন ২৮ জন।

জয়নগর খালের তীরে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। সম্প্রতি ভোলার দৌলতখান উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

ভোলার দৌলতখান উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় জয়নগর খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থাপনা যাতে ভেঙে না পড়ে, সে জন্য তৈরি করা হয়েছে পার্শ্বদেয়াল (গাইড ওয়াল)। দখল করা জমিতে লাগানো হয়েছে গাছ। কেউ আবার সেখানে বালু-ইট রেখে বেচাকেনা করছেন।

উত্তর জয়নগর ভূমি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগে খালের প্রস্থ ছিল ১২০-১৫০ ফুট। দখলদারদের কারণে খালের প্রস্থ এখন ৬০-৬৫ ফুট। জয়নগর খালের অন্তত ৮০ শতাংশ জমি দখল করে আছেন ২৮ জন। দুই মাস ধরে সরেজমিন পরিদর্শন করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ সম্পর্কে দৌলতখান উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহুয়া আফরোজ বলেন, খালের দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা এলে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সদর ও দৌলতখান উপজেলার সীমানায় জয়নগর খালের তীরে গড়ে উঠেছে বাংলাবাজার উপশহর। একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে নতুন নতুন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। গত কয়েক বছরে জমির দাম বেড়ে হয়েছে কয়েক গুণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক শতাংশ জমি ছয়–সাত লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জমির দাম বাড়ার কারণে এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় প্রভাবশালীরা খালের দুই পাশের জমি দখল করছেন।

তেঁতুলিয়া নদী থেকে ভোলা সদর উপজেলার দিঘলদী শান্তিরহাটের পাশ দিয়ে উঠে আসা খালটি বাংলাবাজার হয়ে দৌলতখান উপজেলার উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের মধ্যে কয়েক ভাগে ছড়িয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও অন্য খালের সঙ্গে মিশেছে। বাংলাবাজার এসে খালের একটি শাখা চলে গেছে দক্ষিণে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দিকে। উত্তর জয়নগর ভূমি কার্যালয়ের পূর্ব পাশ থেকে মূলত খালের দখল শুরু।

৬ জুন গিয়ে দেখা যায়, খালের মধ্যে বাজারের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। খালের পাশে অবৈধ বসতি উঠছে। এখানে সড়ক ও জনপথ প্রকৌশল অধিদপ্তরও একটি সেতু নির্মাণ করেছে, এতে খালের প্রস্থ কিছুটা কমেছে। হালিমা খাতুন কলেজের সামনে সেতু পর্যন্ত দখল হয়েছে।

খালের উত্তর তীরে খাসেরহাট বাজার। এ বাজারে চালকলের মালিক মনোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ খাল দিয়ে ধান-চাল পরিবহন করা হয়। নাব্যতা–সংকটে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন।

বাংলাবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এখানে বরিশাল, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট থেকে রড, সিমেন্ট, টিন, ইট, বালু, পাথর, মুদি মালামালের কার্গো-লাইটার জাহাজ আসে। খালের ভেতর মালবাহী নৌযান প্রবেশ করতে না পারলে খরচ বেড়ে যাবে।

খালের দুই পাশ দখল হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দখলকারীরা ভাটার সময় তীরে বাঁশ-কাঠ দিয়ে পার্শ্বদেয়াল নির্মাণ করেন। জোয়ারের সময় পলি জমে, পরে সেখানে গাছ লাগিয়ে, ইট-বালু ফেলে খালের তীর ভরাট করেন। পরে সেখানে বহুতল ভবনের পিলার নির্মাণ করা হয়। কেউ দখল করা জমিতে পাথর, বালু, ইটের ব্যবসা করছেন। কেউ প্লট আকারে বিক্রি করছেন।

উত্তর জয়নগর ইউপির কাছে খালের জমি ভরাট করার অভিযোগ রয়েছে প্রাণকৃষ্ণ পালের বিরুদ্ধে। ভূমি কার্যালয়ের দখলকারীদের তালিকায় তাঁর নাম ১ নম্বরে। তিনি খালের মধ্যে বালু, মাটি ফেলে খালের জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ভূমি কার্যালয়ের হিসাবে, প্রাণকৃষ্ণ খালের ছয় শতাংশ জমি দখল করেছেন।

তবে খাল দখলের কথা অস্বীকার করে প্রাণকৃষ্ণ পাল বলেন, তিনি ৪০ শতাংশ জমি কিনেছেন। ওই জমির সামনে বালু-মাটি ফেলে খালের জমি ভরাট করেছেন। তখন কেউ কিছু বলেনি। বাধাও দেয়নি। পরে ভরাট করা জমি মালবাহী জাহাজ এসে ধসিয়ে দিচ্ছিল। তখন তিনি গাইড ওয়াল নির্মাণ করেন।

ইউপির সামনে খালের দক্ষিণ পাশে খালের জমি দখল করে গাইড ওয়াল ও বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন শাখাওয়াত হোসেন ও হারুন অর রশিদ। শাখাওয়াত বলেন, খালের দক্ষিণ পাশের জমি সম্পূর্ণ রেকর্ডীয় সম্পত্তি। খালের উত্তর পাশ দখল হওয়ার কারণে দক্ষিণ পাশ ভেঙে যাচ্ছে। এ কারণে তাঁরা গাইড ওয়াল নির্মাণ করে ভবন নির্মাণ করেছেন। উপজেলা ভূমি কার্যালয় তাঁর রেকর্ডীয় জমি বুঝিয়ে দিতে পারেননি।

শাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, বালুর কার্গো ও দখলদারদের কারণে খালের গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাঁর ভবনসহ অন্যান্য ভবন হুমকির মুখে পড়বে।

বাংলাবাজারের মধ্যবর্তী তরকারি বাজার এলাকায় খাল দখলের কথা স্বীকার করেন আবদুল মালেক। খালের পাঁচ–ছয় হাত ভরাট করে তিনি ভবন তুলেছেন। আবদুল মালেক বলেন, ভূমি কার্যালয় থেকে তাঁরা ডিসিআর কেটে এ ভবন নির্মাণ করেছেন। গত কয়েক বছর ভূমি কার্যালয়ের অলসতার কারণে ডিসিআর কাটতে পারছেন না।

পাউবোর ভোলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, খালটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দখলদারদের চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।