খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, কৃষকের ক্ষতি

শুকনা মৌসুমে খালের পানি সেচকাজে ব্যবহার করতে পারেননি কৃষকেরা। এখন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের ‘সোহরাবের খালে’ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক ছবি।প্রথম আলো

সরকারি খালের চারটি স্থানে বাঁধ। এটি দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন মাছ চাষ করছেন। অভিযোগ উঠেছে, এই দখলবাজির সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা–কর্মীরা জড়িত।

এদিকে বাঁধ দেওয়ার কারণে খালে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। মাছ চাষের কারণে গত শুকনা মৌসুমে এই খালের পানি সেচকাজে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। এখন বৃষ্টির পানিতে খালের দুই পাড়ের ফসলি জমিতে পানিতে জমে আছে। আমন বীজতলা নিয়ে কৃষক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের চরবগলা ও জাহাজমারা এলাকায় খাসমহল গ্রামের মধ্য দিয়ে খালটি প্রবাহিত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এটি সোহরাবের খাল হিসেবে পরিচিত। একসময়ের খরস্রোতা এই খালে বাঁধ দেওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন খালের দুই পাড়ের শতাধিক কৃষক। খালটি দখলমুক্ত করতে কৃষকদের পক্ষে রাঙ্গাবালীর খাসমহল এলাকার বেলাল ভূঁইয়া নামের এক কৃষক বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ মে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে খালটি দস্যু লোকের কবল থেকে উন্মুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

খালটির দৈর্ঘ্য দেড় কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৩০-৩৫ ফুট। এর আয়তন প্রায় ২৯ দশমিক ৫ একর। খালের মূল শাখা ও উপশাখা (নালা) দখল করে বাঁধ দেওয়ায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, মৌডুবি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল মোল্লা এবং আওয়ামী লীগের কর্মী লিখন মিয়া কয়েক বছর আগে খালটির দুই প্রান্তের বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। গত বছর মৌডুবি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ মোল্লা মূল খালেই বাঁধ দেন।

গত শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, খালটির তিনটি স্থানে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি বড় পুকুর ও ঘেরে পরিণত হয়েছে। সেখানে গলদা চিংড়ি, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ দেশি প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন কৃষক বলেন, খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে এখন বর্ষার পানিতে খেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ঘের বানিয়ে খালে লবণ পানি ঢোকানো হচ্ছে। এ কারণে ওই সব ঘের–সংলগ্ন কৃষিজমিতে এখন চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। প্রভাবশালীরা খাল দখল করায় তাঁরা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছেন না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, তরমুজ আবাদে কৃষক পানিসংকটে ভোগেন। এখন আমন মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বীজতলা করতে পারছেন না কৃষক। জনস্বার্থে খালটি দখলমুক্ত করে উন্মুক্ত করা প্রয়োজন।

এদিকে খাল দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের নেতা ফরহাদ মোল্লা বলেন, জাহাজমারা এলাকার খালটিতে দীর্ঘদিন ধরে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছিল। তখন কেউ বাধা দেননি বা অভিযোগও করেননি। গত বছর তিনি মাছ চাষ শুরু পরই অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে নিষেধ করার পর ওই খালে মাছ চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে এখনো কয়েকজন ওই সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। তিনিও খালের বাঁধ কেটে উন্মুক্ত করার পক্ষে।

তবে লিখন মিয়া দাবি করেন, খালের একটি অংশ (শাখাখাল) তাঁর রেকর্ডের সম্পত্তি। তিনি তাঁর জমির অংশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন।

ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক নেতা নজরুল মোল্লা বলেন, সরকারি খালে তিনি মাছ চাষ করছেন না। খালটির একাংশে তাঁর জমি রয়েছে। কাজেই খাল দখলের অভিযোগ সত্য নয়।

এ প্রসঙ্গে মৌডুবি ইউপির প্রশাসক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি খালটি দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা খালটি দখলমুক্ত করতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। খালের বাঁধ কেটে দখলমুক্ত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

রাঙ্গাবালীর ইউএনও বলেন, কোনোভাবেই সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।