খাড়া পন্টুন দিয়ে চলাচল, দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে যাত্রীরা

বিভিন্ন উপজেলার ২৭টি লঞ্চঘাটের মধ্যে ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ছোট–বড় দুর্ঘটনা লেগে আছে।

ঝুঁকিপূর্ণ ঘাট দিয়ে যাত্রীদের চলাচল করতে হচ্ছে। ৬ ফেব্রুয়ারি ভোলার মনপুরা উপজেলার রামনেওয়াজ লঞ্চঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

ভোলার দৌলতখান উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের পন্টুনে দাঁড়িয়েছিলেন কোহিনুর বেগম (৩৬)। চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া লঞ্চঘাট থেকে ছেড়ে আসা ফারহান-৫ নামের একটি লঞ্চ এসে পন্টুনে ধাক্কা দিয়ে নোঙর করে। লঞ্চের ধাক্কায় কোহিনুর বেগমের বাঁ পা পিছলে পন্টুনের বাইরে চলে যায়। লঞ্চের আরেক ধাক্কায় তাঁর শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গত ১৬ জানুয়ারি রাত সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এভাবে ভোলার বিভিন্ন উপজেলার ২৭টি লঞ্চঘাটের মধ্যে ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষত ভাটার সময় এসব ঘাটের পন্টুন খাড়া হয়ে থাকে। যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। অনেক ঘাটে স্যান্ডেল-জুতা খুলে কাদা পায়ে তক্তা বেয়ে লঞ্চে উঠতে হচ্ছে। ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই আছে।

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের দুর্ঘটনায় আহত কোহিনুর বেগমের বাড়ি দৌলতখানের নূর মিয়ার হাট এলাকায়। এ ঘটনায় তাঁর ছেলে বাদী হয়ে লঞ্চের চালকসহ কর্মচারীদের নামে মামলা করেছেন।

এ সম্পর্কে ফারহান লঞ্চের ব্যবস্থাপক মো. ফারুক বলেন, মেঘনাতীরের প্রতিটি লঞ্চঘাট ব্যবহার অনুপযোগী। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের পন্টুন ভাটার সময় নদীর দিকে কাত হয়ে থাকে। লঞ্চ ঘাটে এলে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে ওঠার চেষ্টা করেন। পন্টুনে সামান্য ধাক্কায় কোহিনুর বেগম পা পিছলে লঞ্চ ও পন্টুনের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ পন্টুনের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

মনপুরা উপজেলার রামনেওয়াজ লঞ্চঘাট দিয়ে প্রতিদিন ২-৩ হাজার যাত্রী লঞ্চে ওঠানামা করেন। দিনের নির্ধারিত দুটি সময়ে ঘাটে চারটি লঞ্চ নোঙর করে। ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি দেখা যায়, পন্টুনে ওঠার জন্য কোনো গ্যাংওয়ে, জেটি ও পন্টুনের সঙ্গে স্পাডপিলার নেই। পন্টুনে উঠতে খাড়া দুটি চিকন কাঠের তক্তা ব্যবহার করতে হয়। যাত্রীর পাশাপাশি মালপত্রও সেখান দিয়ে ওঠানো–নামানো হয়।

রামনেওয়াজ ঘাটের ইজারাদার আবদুস সালাম বলেন, ২৪ লাখ টাকায় ঘাট ইজারা নিয়ে ক্ষতি গুনতে হচ্ছে। মালামাল ওঠানামায় সমস্যা। যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের কটু কথা শুনতে হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠতে গিয়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে।

একইভাবে দুরবস্থায় রয়েছে লালমোহন উপজেলার মঙ্গল শিকদার, তজুমদ্দিনের চৌমহনী, বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাকিমুদ্দিনসহ ২৪টি লঞ্চঘাট। অনেক ঘাটে পন্টুনে ওঠানামায় সমস্যা দেখে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ঘাট রেখে পাশে নোঙর করছে। এতে পানি উন্নয়নে বোর্ডের (পাউবো) ব্লক বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে ভোলা নদীবন্দর লঞ্চঘাট, বোরহানউদ্দীন লঞ্চঘাট ও ভেদুরিয়া ফেরিঘাট ভালো অবস্থায় রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোলার ২৭টি লঞ্চঘাট ইজারা দিয়ে সরকার বছরে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচ্ছে। তবে ঘাটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সংস্কারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

বিআইডব্লিটিএর ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভোলায় বিআইডব্লিটিএর দুটি ফেরিঘাটসহ ২৭টি লঞ্চঘাট রয়েছে। আধুনিক মানের দুটি লঞ্চঘাট আছে। ৫টি ঘাটের আধুনিকায়নের কাজ দ্রুত শুরু হবে।