খুঁটি না সরিয়ে সম্প্রসারণ

সড়কের মধ্যে শতাধিক খুঁটি থাকায় কাজের গতি কমেছে। সড়কের গুণমান রক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

বিদ্যুতের খুঁটি মাঝে রেখেই চলছে সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ। গতকাল খুলনা নগরের শেরেবাংলা সড়কের আমতলা মোড় এলাকায়
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

খুলনা নগরের শেরেবাংলা সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। ওই সড়কের মাঝবরাবর পড়েছে বিদ্যুতের শতাধিক খুঁটি। এসব খুঁটি রেখেই চলছে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ। এতে একদিকে যেমন কাজের গতি ধীর হচ্ছে, অন্যদিকে সড়কের গুণগত মান ঠিক থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, কাজের গতি ধীর হলেও সঠিক সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। বিদ্যুতের খুঁটিগুলো অপসারণ করা হলে ওই স্থানে নতুন করে বালু ও ইটের খোয়া ভরাট করা হবে। এতে সড়কের মানের কোনো তারতম্য ঘটবে না।

খুলনা নগরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেড। খুঁটি না সরানোর বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং ওজোপাডিকোর কর্মকর্তারা। সওজের দাবি, বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও খুঁটি সরাচ্ছে না ওজোপাডিকো। অন্যদিকে ওজোপাডিকো বলছে, খুঁটি সরানোর জন্য যে টাকা দেওয়ার কথা, তা এখনো পাওয়া যায়নি।

খুলনার শেরেবাংলা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয় ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট। এরপরই সড়কের দুই পাশে থাকা বিদ্যুতের শতাধিক খুঁটি স্থানান্তরের জন্য ওজোপাডিকোকে চিঠি দেয় সড়ক বিভাগ। তারপরও অপসারণ না করায় সড়কের ওপর খুঁটি রেখেই কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সড়ক বিভাগ থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় নগরের ময়লাপোতা মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হবে। এ জন্য ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল মাহবুব ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছে সড়ক বিভাগ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী চার কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণ, পাঁচটি বক্স কালভার্ট ও দুই পাশে চার কিলোমিটার করে আট কিলোমিটার কংক্রিটের ড্রেন নির্মাণ করতে হবে। ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের অক্টোবর সড়কের কাজ শুরু হওয়ার পর খুঁটি অপসারণের জন্য ওজোপাডিকোকে আরও দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়। এরপরও অপসারণ না করায় সড়কের পাশে খুঁটি রেখেই কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

খুঁটি অপসারণের জন্য সওজ থেকে ৯৭ লাখ টাকা দেওয়ার কথা, কিন্তু তা এখনো পাওয়া যায়নি। এ কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
মো. আবু হাসান, নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই সড়কের আমতলা এলাকায় কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি বুলডোজার ও মাটি কাটার যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রস্থ অনুযায়ী সড়ককে তিন ভাগে ভাগ করে তাতে চলছে মাটি খোঁড়া ও বালু ভরাটের কাজ। সড়কের দুই পাশেই রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। খুঁটির গোড়ার প্রায় দুই মিটার ব্যাসার্ধের কিছু জায়গা বাদ রেখেই কাজ করা হচ্ছে। এভাবেই গল্লামারী থেকে ওই পর্যন্ত বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই সড়কের কাজ করা হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফ আলী বলেন, ভবিষ্যতে খুঁটি স্থানান্তরের সময় ওই স্থান আবার খুঁড়তে হবে। এরপর সেখানে আবার বালু ও ইটের খোয়া ফেলে কাজ করতে হবে। এর আগে যশোর সড়কে কাজ করেছে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখন দিনে ১৫০ মিটার কাজ করেছিল। কিন্তু শেরেবাংলা সড়কে বিদ্যুতের খুঁটির কারণে ৫০ থেকে ৬০ মিটারের বেশি কাজ করাতে পারছে না। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেরও খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান আশরাফ আলী।

সওজ বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, সড়কের কাজ ফেলে রাখা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে খুঁটি রেখেই কাজ করতে হচ্ছে। একটু ধীরগতি হলেও সঠিক সময়ে কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। তা ছাড়া খুঁটি সরানোর পর ওই স্থানগুলোতে অন্য জায়গার মতো একইভাবে বালু ও ইটের খোয়া দিয়ে ভরাট করা হবে।

জানতে চাইলে ওজোপাডিকোর নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. আবু হাসান বলেন, বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। তবে ওই কাজ করার জন্য সওজ থেকে ৯৭ লাখ টাকা দেওয়ার কথা, কিন্তু তা এখনো পাওয়া যায়নি। এ কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

সওজ খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী বলেন, টাকা দেওয়ার সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ওজোপাডিকোকে টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।