খুলনা বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি জুলাইয়ে

করোনায় মৃত্যু
ফাইল ছবি

খুলনা বিভাগে করোনায় সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে জুলাই মাস ছিল ভয়ংকরতম। এখন পর্যন্ত বিভাগে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ২ হাজার ৩৮৮ জন। এর মধ্যে সদ্য শেষ হওয়া জুলাই মাসেই করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮, যা মোট মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি। এ মাসে করোনায় গড়ে প্রতিদিন ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় জুলাইয়ে চিকিৎসাধীন করোনা রোগী এবং হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যাও বেশি ছিল। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র জানা যায়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, জুলাইয়ের প্রথম তিন সপ্তাহ খুলনা বিভাগের করোনা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ ছিল। হাসপাতালগুলোয় শয্যাসংখ্যার অতিরিক্ত রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহ করাও চ্যালেঞ্জপূর্ণ ছিল। তবে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমে আসে। ঈদুল আজহার পর কঠোর বিধিনিষেধে মানুষের চলাচল কিছুটা কমেছে। করোনা সংক্রমণও ধীরে ধীরে কিছুটা কমছে। হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ফাঁকা আছে। যদিও আইসিইউ শয্যা খালি নেই। সংক্রমণের হার ২৫ থেকে ২৮ শতাংশের মধ্যেই থাকছে। তবে খুলনা সংক্রমণের চূড়ান্ত পরিস্থিতি পাড়ি দিয়ে ফেলেছে কি না, তা বলা যাচ্ছে না।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর ও করোনা চিকিৎসায় জড়িত চিকিৎসকেরা জানান, খুলনা বিভাগে গত বছরের ১৯ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায়। শনাক্তের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণের গতি ধীর ছিল। জুনে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। জুলাই মাসে দুটিই অনেক বেড়ে যায়। আগস্টে সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু কিছুটা কমে। সেপ্টেম্বর থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে থাকে। এরপর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি উন্নতির দিকে ছিল। গত এপ্রিলের শুরু থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে। জুনে শনাক্তের রেকর্ড কয়েক দফায় ভেঙে যায়। এরপর জুলাইয়ের প্রথম তিন সপ্তাহে শনাক্ত, শনাক্তের হার, মৃত্যু সব সূচকই ছিল কেবল ঊর্ধ্বমুখী।

করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জুন মাসে বিভাগে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৪২৫ জন, করোনা শনাক্ত হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৪ জনের। আর সদ্য শেষ হওয়া জুলাই মাসের ৩১ দিনে বিভাগে ৩৬ হাজার ৬৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হওয়া ৯২ হাজার ৯৩২ জন রোগীর প্রায় ৪০ শতাংশ। জুলাইয়ে করোনায় মারা গেছেন ১ হাজার ৩১৮ জন। অর্থাৎ মোট মৃত্যুর ৫৫ শতাংশের বেশি মারা গেছেন জুলাইয়ে। আর সুস্থ হয়েছেন ৩০ হাজার ৩৮৫ জন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৪৮ হলেও জুলাইয়ে গড় শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ৮৩। তবে জুলাইয়ের শেষ সাত দিনে শনাক্তের হার কিছুটা কমে গড়ে প্রতিদিন ২৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে।

এদিকে জুলাই মাসে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে করোনা রোগী এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যাও ছিল বেশি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মোট শনাক্ত রোগীর চেয়ে সুস্থ হওয়া ও মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বাদ দিলে বিভাগে ৩১ জুলাই চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ২১ হাজার ৭৫৮ জন। ঠিক এক মাস আগে জুন মাসের ৩০ তারিখে চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ১৬ হাজার ৮০৪ জন। গত এক মাসে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজার ১৫৩ জন। অথচ জুন মাসে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন ২ হাজার ৬৬৯ জন।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল মুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ের শেষ দিকে শনাক্ত ও মৃত্যু কিছুটা কমেছে। তবে এটা এখনই সুখবর নয়। যে পর্যন্ত সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে না নামে, সে পর্যন্ত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি বলা যাচ্ছে না। তাই অসতর্কভাবে চলাফেরা করার কোনো উপায় নেই। করোনার সংক্রমণ যেকোনো সময় আবার বাড়তে পারে। বিধিনিষেধ সামনে থাকুক বা না থাকুক, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। আগামী ৭ আগস্ট থেকে বড় পরিসরে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। সবাইকে অবশ্যই টিকা নিতে হবে।