খুলনায় পুলিশি বাধায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিক্ষোভ মিছিল পণ্ড

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, লেখক মোশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ চার দফা দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট খুলনা জেলা কমিটির বিক্ষোভ মিছিলে বাঁধা দেয় পুলিশ। বৃহস্পতিবার খুলনা নগরের পিকচার প্যালেস মোড়েছবি: প্রথম আলো

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিচারে বিভাগীয় তদন্তসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করতে চেয়েছিল বাম গণতান্ত্রিক জোট খুলনা জেলা শাখা। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে মিছিল করতে পারেনি তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা–কর্মীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে সিপিবি কার্যালয় থেকে ওই বিক্ষোভ মিছিল বের করার কথা ছিল।

বেলা সাড়ে তিনটা থেকেই সমাবেশস্থল পিকচার প্যালেস মোড় ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ের সামনের সড়কে ব্যাপক পুলিশের সমাগম দেখা যায়। বেলা যত বাড়তে থাকে পুলিশের তৎপরতা তত বাড়ে। ওই সময় থেকে সিপিবি কার্যালয়ের দিকে লোকজনকে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। তবে চারটার পর থেকে পিকচার প্যালেসের সামনে দিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে মহানগর শ্রমিক লীগের কয়েকটি মিছিল যেতে দেখা যায়।

বিকেল পাঁচটার দিকে সিপিবি কার্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে পিকচার প্যালেসের সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় নেতাকর্মীরা জোর করলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। মিছিলকারীদের ব্যানার কেড়ে নেওয়া হয়। তবে কেউ আহত হননি। পরে ফিরে এসে বিক্ষোভকারীরা সিপিবি কার্যালয়ের গলির মধ্যে সমাবেশ করেন। এ সময় তাঁরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত কর্মসূচি থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সাত ছাত্রনেতা ও শ্রমিকনেতা রুহুল আমিনের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানান।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, লেখক মোশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ চার দফা দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট খুলনা জেলা কমিটি বিক্ষোভ মিছিল বের করার আগেই পুলিশ সুন্দরবন গলির সিপিবি কার্যালয় ঘিরে রাখে। একই সঙ্গে পুলিশ লোকজনকে সুন্দরবন গলিতে ঢুকতে বাধা দেয়। বৃহস্পতিবার খুলনা নগরের পিকচর প্যালেস মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

কর্মসূচি চলাকালে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফোন করে সদর থানার এক এসআই তাঁকে বিক্ষোভ মিছিল না করতে বলেন। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি থেকে বের হয়ে আসার কোনো উপায় ছিল না। অন্যদিকে কর্মসূচির কথা পুলিশ কমিশনারকেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিক্ষোভ মিছিল বের করার পর পুলিশি বাধায় তাঁদের ফিরে আসতে হয়েছে।

সিপিবি কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা পুলিশের এমন মারমুখী আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাঁরা বলেন, বর্তমানে এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে কেউ কিছু বলতে গেলেই বিপদে পড়তে হচ্ছে। ভিন্নমত দমনে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আর এসবের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
বক্তারা আরও বলেন, ‘লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। লেখকের মৃত্যুর তদন্ত ও বিচার সরকারকেই করতে হবে। আমরা তাঁর মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। তদন্তপূর্বক বিচার না হলে সারা দেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

সিপিবি কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা পুলিশের এমন মারমুখী আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাঁরা বলেন, বর্তমানে এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে কেউ কিছু বলতে গেলেই বিপদে পড়তে হচ্ছে।

বক্তারা বলেন, এই সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। জনগণের সম্মতি ছাড়া সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আছে। ভোট ছাড়া ক্ষমতায় থাকার অর্থ হচ্ছে জনগণকে অপমান করা। নিজেদের মসনদকে নিরাপদ করার জন্য সরকারের আগ্রাসী থাবা থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছে না।

স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটের সমালোচনা করলেই তারা জনগণের বাকস্বাধীনতা ও সংবাদকর্মীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী । এতে সিপিবি কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা সভাপতি মনোজ দাশ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) খুলনা জেলা সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা সভাপতি মোজাম্মেল হক খান, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ খুলনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা খালিদ খসরু প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুন