খুলনায় বাড়ছে করোনা, চলছে ইউপি নির্বাচনের প্রচারণাও

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

খুলনায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। ১ থেকে ৮ জুন খুলনা জেলায় ২ হাজার ৭৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৭৫ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর আগের ৮ দিনে ১ হাজার ৬০৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৪৯ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ৭ শতাংশ। এরই মধ্যে জেলায় চলছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রচারণাও।

প্রথম ধাপে খুলনার ৫টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নে গত ১১ এপ্রিল ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সারা দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি আবার ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ২১ জুন প্রথম ধাপের নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এবার ৩৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। পাইকগাছার হরিঢালী ইউনিয়নের এক চেয়ারম্যান প্রার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কারণে ওই ইউনিয়নের নির্বাচনে স্থগিতাদেশ রয়েছে।

যেসব ইউপিতে নির্বাচনের পুনঃ তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে আবার প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থীরা। এতে প্রার্থী ও ভোটার দুই তরফেই করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খুলনা জেলায় ৯টি উপজেলায় ৬৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে যেসব ইউপিতে নির্বাচনের পুনঃ তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে আবার প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থীরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন তাঁরা। এতে প্রার্থী ও ভোটার দুই তরফেই করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত ১০০ শয্যার খুলনা বিভাগীয় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ধারণক্ষমতার অনেক বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ওই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ১২৯ জন। চিকিৎসকেরা জানান, এত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।

এ পরিস্থিতিতে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গড়াইখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শান্ত কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুলনায় লোকজন যেভাবে করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন, তাতে নিজেরই ভয় লাগছে। এরই মধ্যে মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে হচ্ছে, কাঁধে কাঁধ ও হাতে হাত মেলাতে হচ্ছে, কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে মনে আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে।’

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গড়াইখালী ইউনিয়নের কুমখালী গ্রামে এভাবেই নির্বাচনী প্রচারণার চিত্র
প্রথম আলো

হঠাৎ নির্বাচনের পুনঃ তফসিল ঘোষণা করায় এমন বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্য পদের প্রার্থীরা। ভোটের মাঠে সক্রিয়তা দেখাতে গিয়ে করোনাকে আর তোয়াক্কা করছেন না তাঁরা। যদিও মনের মধ্যে খচখচানি থেকেই যাচ্ছে।

দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের সদস্য পদপ্রার্থী নিরেন্দু মণ্ডল বলেন, গ্রাম এলাকার মানুষের মধ্যে করোনার তেমন ভয় নেই। মানুষ খুব বেশি মাস্কও পরে না। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামেও এখন করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। অনেকের মধ্যে উপসর্গ রয়েছে। কিন্তু ভোট প্রার্থনা করতে এত কিছু ভাবলে চলছে না।

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোটাররাও। কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা অভিযোগ করেন, রাস্তাঘাটে যেখানেই দেখা হচ্ছে, সেখানেই প্রার্থীরা জোর করে জড়িয়ে ধরছেন, হাত মেলাচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। কয়রা সদর ইউনিয়নের হাফিজুর রহমান বলেন, গ্রামের মানুষের মধ্যে করোনার ভয় কম। তারপরও এড়িয়ে যেতে চাইলেও প্রার্থীরা জোর করে এসে হাত মেলাচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘন করছেন। বাইরে না বের হলেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবার সঙ্গে দেখা করে আসছেন। এতে যে কেউ সংক্রমিত হতে পারেন।

ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ও মহানগরের মধ্যে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। ৪ জুন থেকে খুলনা মহানগর ও পাশের রূপসা উপজেলায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ওই বিধিনিষেধ চলবে ১০ জুন পর্যন্ত। অন্যদিকে পাইকগাছা পৌরসভা এলাকায় সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ ছাড়া উপজেলার চারটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারও এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই ঘোষণা দেয় উপজেলা প্রশাসন।

খুলনা জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই দিনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোট গ্রহণ করা হবে।

খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, নির্বাচন হলে লোকসমাগম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আর এক জায়গায় বেশি লোকসমাগম হলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। যেহেতু তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচারণা করার আহ্বান জানান তিনি।