খুলে পড়ছে পলেস্তারা, ব্যবহার অনুপযোগী নিচতলা

ভবনের নিচতলায় বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, তত্ত্বাবধায়ক, আরএমওর কক্ষ, এক্স-রে কক্ষ, ল্যাবরেটরি ছাড়াও বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ করার কক্ষ রয়েছে। ছয়টি কক্ষ এ মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের নিচতলায় তত্ত্বাবধায়কের কক্ষের ছাদ থেকে গত রোববার পলেস্তারা খসে পড়ে। সোমবার তোলা ছবি।
প্রথম আলো

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তিন তলা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ার পর থেকে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরাও হাসপাতাল ভবনটি পরিদর্শন করে নিচতলার ছয়টি কক্ষ ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সালেহ মোহাম্মদ ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ৩৫ বছর আগে গণপূর্ত বিভাগ হাসপাতালের প্রথম তলার ভবনটি নির্মাণ করে। পরে ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ওই ভবনটি দোতলা ও তিনতলায় উন্নীত করে। দীর্ঘ সময় হাসপাতালটি সঠিকভাবে সংস্কার করা হয়নি। তাই নিচতলার কিছু বিম ও স্লাবে ফাটল সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন স্থানে ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়ছে। সংস্কার না করে এখন নিচতলা ব্যবহার করা ঠিক হবে না। ঝুঁকি থাকায় ছয়টি কক্ষ এ মুহূর্তে ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই কক্ষগুলো খালি করে দেওয়া হলে সংস্কার কাজের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

গত রোববার ভোরের দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মুনীর আহমদ খানের কক্ষের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ে। এতে কক্ষে থাকা কম্পিউটার ও বিভিন্ন আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুনীর আহমদ খান ওই ভবনে কার্যালয়ের কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর বাসভবনের একটি কক্ষে দাপ্তরিক কার্যক্রম সরিয়ে নিয়েছেন।
মুনীর আহমদ খান প্রথম আলোকে বলেন, গত পাঁচ বছরে চার দফা বিভিন্ন ফ্লোরের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়েছে। ২০১৮ সালে নিচতলার করিডরে ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ে তিন ব্যক্তি আহত হয়েছিল। রোববার তাঁর কক্ষের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে বসার চেয়ার ও টেবিলে পড়েছে। তখন তিনি কক্ষে না থাকার কারণে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের নিচতলায় তত্ত্বাবধায়কের কক্ষের ছাদ থেকে গত রোববার পলেস্তারা খসে পড়ে। সোমবার তোলা ছবি।
প্রথম আলো

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৮৫ সালে জেলা শহরে ৩০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। ১৯৯০ সালে তা ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরে ২০০৩ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৮৫ সালে ভবনের এক অংশ একতলা ও আরেক অংশ দোতলা করা হয়। এরপর ১০০ শয্যা করার পর ২০০৮ সালে পুরো ভবনটিকে তিনতলায় বর্ধিত করা হয়। ভবনের ভিত দুর্বল থাকায় তখন ওই অবস্থার মধ্য দিয়ে ১৬টি অতিরিক্ত পিলার (খুঁটি) স্থাপন করে ভবনের বর্ধিত অংশের কাজ করা হয়।

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুমন কুমার পোদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, ভবনের নিচতলায় বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, তত্ত্বাবধায়ক, আরএমওর কক্ষ, এক্স-রে কক্ষ, ল্যাবরেটরি ছাড়াও বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ করার কক্ষ রয়েছে। ছয়টি কক্ষ এ মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ। শনিবার থেকে সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর কক্ষে কাজ করবেন না বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন।

হাসপাতাল ভবনটির বিভিন্ন স্থানের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ছে। অনেক স্থানে ছাদের পলেস্তারায় ফাটল রয়েছে। অনেক কক্ষ দিয়ে পানি পড়ে। আমরা আতঙ্ক নিয়ে অফিস করছি।
বজলুর রহমান, হাসপাতালের অফিস সহায়ক

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক জ্যেষ্ঠ নার্স প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালে ভবনের বর্ধিত অংশের কাজটি নিম্নমানের করা হয়েছিল। তিনি হাসপাতালে কর্মরত থাকার কারণে নির্মাণকাজ দেখেছেন। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি তখন। ১২ বছর পর আজ সবাই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।

হাসপাতালের অফিস সহায়ক বজলুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতাল ভবনটির বিভিন্ন স্থানের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ছে। অনেক স্থানে ছাদের পলেস্তারায় ফাটল রয়েছে। অনেক কক্ষ দিয়ে পানি পড়ে। এমন অবস্থায় কয়েক দফা ছাদের পলেস্তারা ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা আতঙ্ক নিয়ে অফিস করছি।’

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আবদুল্লাহ আল মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের ভবনটি পুরোনো। তাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হবে। সে জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ওই ভবন চালু না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো ভবন সংস্কার করে কার্যক্রম চালানো হবে।