খেতে পানি, বোরোর ক্ষতি

  • জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে।

  • ৯৫ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।

বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধান। গতকাল যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হরিদাশকাটি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে যশোরে তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো বাতাসে জেলার বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার কৃষকেরা।

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে গত সোমবার সকাল থেকে যশোরে বৃষ্টি শুরু হয়। পরদিন মঙ্গলবার দিনভর কখনো মাঝারি ও আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হয়। তবে গতকাল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। কৃষকেরা বলেন, বেশির ভাগ খেতের বোরো ধান পেকে গেছে। অনেকে ধান কেটে খেতে শুকাতে দিয়েছেন। আবার অনেকে ধান কেটে মাড়াই করছেন। দেরিতে লাগানো ধান কাটতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে। তিন দিনের বৃষ্টিতে খেতে পানি জমে গেছে। অনেক খেতে শুকাতে দেওয়া কাটা ধান পানিতে ভাসছে। ঝোড়ো বাতাসে ধানগাছ নুইয়ে খেতে জমে থাকা পানির মধ্যে পড়েছে। বৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশি টাকা দিয়েও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

বেশির ভাগ খেতের বোরো ধান পেকে গেছে। অনেকে ধান কেটে খেতে শুকাতে দিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, যশোর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন। গতকাল পর্যন্ত ৯৫ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। অর্থাৎ ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।

মনিরামপুর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের কৃষক আমির হোসেন এবার সাড়ে ৮ বিঘা (৪২ শতকে বিঘা) জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। তাঁর খেতের সব ধান পেকে গেছে। তিনি সাড়ে চার বিঘা জমির ধান কেটে খেতে শুকাতে দিয়েছিলেন। তিন দিনের বৃষ্টিতে তাঁর খেতে প্রায় এক হাত পানি জমে গেছে। তিনি বলেন, ‘খেতে কোথাও এক হাত আবার কোথাও প্রায় হাঁটু পানি। খেতে বিছিয়ে দেওয়া ধানগাছ পচে গেছে। ধানের গাছ থেকে শিষ ভেঙে পড়ছে। পানিতে ভিজে ধানের অঙ্কুরোদগম শুরু হয়েছে। বেশি টাকা দিয়েও কোনো শ্রমিক পাচ্ছি না। খুব ক্ষতির মুখে পড়েছি।’

অভয়নগর উপজেলার বগুড়াতলা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি এবার ১০ কাঠা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। ধান কেটে খেতে ধান শুকাতে দিয়েছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে আমার সব ধান ভিজে গেছে। ধান এখনো বাড়ি নিতে পারিনি। ধানের গাছ থেকে শিষ খুলে খুলে পড়ছে। খুব ক্ষতি হয়ে গেছে।’

কেশবপুর উপজেলার বারুইহাটি গ্রামের মজিবর সানা বলেন, তাঁর ১৫ কাঠা জমির ধান বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধান কাটার শেষ মুহূর্তে বৃষ্টি এসেছে। এতে ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ওই গ্রামের জামাল গাজী খেতের ভেজা ধান রাস্তার ধারে উঁচু স্থানে এনে রাখছেন। তিনি বলেন, সামনের চার-পাঁচ দিন রোদ না হলে সব ধান অঙ্কুরোদগম হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপঙ্কর দাশ বলেন, জেলার ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ জমির ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। বৃষ্টিতে খেতে কেটে রাখা ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। ভিজে যাওয়া ধানের গাছ থেকে শিষ ভেঙে পড়ছে। ধানের অঙ্কুরোদগম শুরু হয়েছে। ভিজে যাওয়া ধানের দাম কম হবে। তবে আর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।