খেতে সার–কীটনাশকে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

* জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ধ্বংস করতে গিয়ে উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস হচ্ছে।

* কিডনি ও যকৃতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হচ্ছে।

* কৃষি বিভাগের পরামর্শে সহনীয় পর্যায়ে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা হলে ক্ষতি কম হবে।

ফাইল ছবি

যশোরে ফসলের খেতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন কৃষিজ ও প্রাণিজ খাদ্যের মাধ্যমে কীটনাশক মানবদেহে প্রবেশের কারণে মানুষের হার্ট, কিডনি, লিভার, স্নায়ু, ত্বক আক্রান্ত হচ্ছে। নানাবিধ ফলমূলে রাসায়নিক পাউডার দিয়ে কাঁচা ফল পাকানো হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস।

এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, ফসলে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে কিডনি ও যকৃতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হচ্ছে। কৃষি বিভাগের নিয়মানুযায়ী সহনীয় পর্যায়ে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা উচিত, তাহলে তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। এসব জমিতে ধান, পাট, সবজি, শর্ষে, মসুর, আলু, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হয়। ফসলের খেতে প্রাথমিকভাবে জৈব সার, ফেরোমোন বড়ি এবং হাত ও আলোর ফাঁদ দিয়ে পোকা দমনসহ যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়। তাতে কাজ না হলে পরিমিত পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। জেলায় কৃষকদের সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) ও সমন্বিত শস্য ব্যবস্থাপনা (আইসিএম) ক্লাব আছে। এসব ক্লাবে কৃষকদের সার ও কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপরও অনেক কৃষক অধিক ফলনের জন্য খেতে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করেন। ফসলের খেতে সার ও কীটনাশকের অতি ব্যবহারের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ধ্বংস করতে গিয়ে ফসলের উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস হচ্ছে। কীটনাশকের কারণে বিল, হাওর মাছশূন্য হয়ে পড়েছে।

কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাছে অধিক ফলনের জন্য খেতে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী কোনো ফসলে এক সপ্তাহ বা ১৫ দিন পরপর খেতে কীটনাশক দেওয়ার কথা। কীটনাশক প্রয়োগের এক সপ্তাহ পর ফসল সংগ্রহ করার কথা থাকলেও অনেক কৃষক তা প্রয়োগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফসল সংগ্রহ করে বাজারজাত করছেন। এসব কীটনাশক প্রয়োগ করলে খেতের আশপাশের নদী, ছড়া, নালা এমনকি জলাভূমিতে তা ছড়িয়ে পড়ে উদ্ভিদ, ব্যাঙ, মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী মারা যায়।

যশোরের চৌগাছা উপজেলার তারানিবাস গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘এবার দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান করেছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শমতো খেতে সার ও কীটনাশক দিয়েছি। ধানের গাছ ভালো হয়েছে। আশা করছি, ফলন ভালো হবে।’

অভয়নগর উপজেলার মধ্যপুর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, ‘এবার দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। খেতে অল্প অল্প করে সার ও কীটনাশক দিতে পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এতে ধান ভালো হয় না, পোকামাকড়ে খেয়ে যায়। আমি একটু বেশি পরিমাণ সার ও কীটনাশক খেতে দিয়েছি। ধানগাছের যে অবস্থা, তাতে ধান ভালোই হবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপঙ্কর দাশ বলেন, পরিমিত পরিমাণ সার ও কীটনাশক সার ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন বাড়ে। কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত কৃষকদের সহনীয় পর্যায়ে সার ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে জৈব সার, ফেরোমোন বড়ি এবং হাত ও আলোর ফাঁদ দিয়ে পোকা দমনসহ যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে কাজ না হলে পরিমিত পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।