খেলার মাঠ বিক্রির চেষ্টা

দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের খেলার জায়গা ওই মাঠ। এলাকার লোকজনও ওই মাঠে খেলাধুলা করে।

নিজেদের জমি দাবি করে খেলার মাঠের একটি অংশ তারকাঁটার বেড়া দিয়েছে একটি পক্ষ। জমি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মাগুরার নান্দুয়ালী ডিইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরেছবি: প্রথম আলো

চারটি প্রতিষ্ঠানের জায়গা মিলে একটা খেলার মাঠ। এর মধ্যে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের খেলার জায়গা ওই মাঠ। এলাকার লোকজনও ওই মাঠে খেলাধুলা করে। সম্প্রতি সেই খেলার মাঠের একটি অংশ কাঁটাতারে ঘেরা পড়েছে।

ওই জমির মালিকানা দাবি করে জমি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে একটি পক্ষ। বিষয়টি নিয়ে মাঠ ঘিরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জমি নিয়ে চলা এই বিরোধে হাইকোর্টে মামলাও চলছে।

খেলার মাঠটির অবস্থান মাগুরা পৌর এলাকার নান্দুয়ালি গ্রামে। সেখানে থাকা চারটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নান্দুয়ালী দিরাজউদ্দিন (ডিইউ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নান্দুয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আঠারোখাদা ইউনিয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি ও আঠারোখাদা ইউনিয়ন পরিষদ। এর মধ্যে আঠারোখাদা ইউনিয়ন পরিষদ প্রায় তিন দশক আগে মাগুরা-শ্রীপুর সড়কের কামারবাড়ি এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। তবে তাদের পুরোনো ভবন নান্দুয়ালী ওই খেলার মাঠের পাশে রয়ে গেছে।

ওই চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরো চত্বরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫৪ শতাংশ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৬ শতাংশ, সমবায় সমিতির ১০ ও আঠারোখাদা ইউনিয়ন পরিষদের ১০ শতাংশ জমি রয়েছে। মোট ১ একর ১০ শতাংশ জমি। এর মধ্যে বিরোধপূর্ণ হচ্ছে আঠারোখাদা ইউনিয়ন পরিষদের ১০ শতাংশ জমি। প্রায় তিন দশক আগে এই জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন নান্দুয়ালী গ্রামের আফসার উদ্দিন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি। কয়েক বছর আগে তাঁর মৃত্যুর পর মামলাটির বাদী হয়েছেন তাঁর সন্তানদের একজন মরিয়ম বেগম।

বাদীপক্ষ দাবি করেছে মামলার রায় তাঁদের পক্ষে। এ কারণে বাদীপক্ষকে সব প্রমাণসহ আসতে বলেছি।
ইয়াসিন কবির, ইউএনও, মাগুরা সদর উপজেলা

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন সপ্তাহ আগে খেলার মাঠের একটি অংশে তারকাঁটার বেড়া দিয়েছে জমির মালিকানা দাবি করা ব্যক্তিরা। ১০০৯ দাগের ১৭ শতাংশ জমি বিক্রির একটি বিজ্ঞপ্তিও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে মাঠের পাশে। সেখানে জমির মালিক হিসেবে আফছার উদ্দিন আহম্মদের নাম লেখা আছে। দুই সপ্তাহ আগে ওই জমিতে থাকা শত বছরের পুরোনো একটি নিমগাছ কাটতে গিয়েছিল ওই পক্ষ। তবে প্রশাসনের বাধায় গাছটি কাটতে পারেনি তারা।

আঠারোখাদা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঞ্জীবন বিশ্বাস বলেন, নখাতুল্লাহ বিশ্বাস নামের একজন সমাজসেবক এই জমি ইউনিয়ন পরিষদকে দান করেছিলেন। আরএস রেকর্ডে জমিটির মালিক ইউনিয়ন পরিষদ। তবে তিন দশক আগে যখন পরিষদ স্থানান্তর করা হয়, তখন নখাতুল্লাহ বিশ্বাসের সন্তানেরা জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করেন। এরপর বিচারিক আদালতের রায় পরিষদের পক্ষে যায়। আপিলে আবার বাদীর পক্ষে রায় দেন আদালত। মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন।

জানতে চাইলে মামলার বাদী মরিয়ম বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জায়গাটি আমার পৈতৃক সম্পত্তি। আমার দাদা পরিষদকে ভাড়া দিয়েছিলেন। তাই আমার বাবা মামলা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর আমরা অনেক কষ্ট করে মামলা চালিয়েছি। নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাই জমি ঘিরেছি।’

আঠারোখাদা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে হাইকোর্টে মামলাটি লড়ছেন আইনজীবী তাপস কুমার বিশ্বাস। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই জমির মালিকানার বিরোধ নিয়ে চলা মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন। এ অবস্থায় জমি কেনাবেচা যদি কেউ করেস, তবে তাঁর নিজ দায়িত্বে করতে হবে। তবে কেউ যদি এই জমি কেনেন, তিনি আসলে একটা মামলা কিনবেন।’

আঠারোখাদা ইউনিয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফিল উদ্দিন লেন, ‘ওরা (বাদীপক্ষ) জমি যেটা দাবি করেছে, তার সঙ্গে আমাদের জমিও ঘিরে ফেলেছে। এটা বেআইনি। আমরা চাই মাঠটা আগের মতোই থাকুক।’

নান্দুয়ালী দিরাজউদ্দিন (ডিইউ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রাশেদ মাহমুদ শাহিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা চলাকালীন জমি বিক্রির সুযোগ নেই। তাঁরা খেলার মাঠের এই জমি ঘিরতে পারেন না। তাঁরা ১০ শতক দাবি করলেও ঘিরে ফেলেছেন ২০ শতকের মতো।’

নান্দুয়ালী দিরাজউদ্দিন (ডিইউ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ টি এম আনিসুর রহমান বলেন, এই খেলার মাঠটা কেবল দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি, তা নয়। এলাকার কয়েক হাজার মানুষের খেলাধুলা, সামাজিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের অন্যতম জায়গা।’ ৭ নম্বর নান্দুয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী ফারহানা রহমান বলেন, ‘খেলার মাঠের জায়গা কমে যাবে বলে আমরা বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর দিইনি।’

সদর উপজেলার ইউএনও ইয়াসিন কবির বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে ওই মাঠের পাশে একটি পুরোনো নিমগাছ কাটার ব্যাপারে অভিযোগ আসে। তাৎক্ষণিকভাবে গাছটা কাটা বন্ধ করি। বাদীপক্ষ দাবি করেছে মামলার রায় তাঁদের পক্ষে। তবে এ ধরনের ঘটনায় আদালত কোনো সিদ্ধান্ত দিলে স্থানীয় কোনো কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয় জমির প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। এ কারণে বাদীপক্ষকে সব প্রমাণসহ আসতে বলেছি।’