গফরগাঁওয়ে একে একে ধসে পড়ল তিন সেতু

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চর আলগী গ্রামে সেতু ধসে পড়েছে। ২৯ মে তোলা ছবি
প্রথম আলো

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চর এলাকায় বোরাখালি খালের ওপর নির্মিত তিনটি সেতু ও একটি কালভার্ট ধসে পড়েছে। এর মধ্যে দুটি সেতু ও একটি কালভার্ট গত বুধবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে ধসে পড়ে। অপর একটি সেতু সম্প্রতি ধসে পড়ে। এতে ওই এলাকার লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সেতু তিনটি পাইলিং না করেই নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আনুমানিক দুই মাস আগে বোরাখালি খালে খননকাজ করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। অপরিকল্পিত খননের কারণে সেতুগুলোর দুই পাশের মাটি সরে যাওয়ায় বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেতু ও কালভার্ট ধসে পড়তে শুরু করেছে।

গফরগাঁও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, চর মছলন্দ গ্রামের সেতুটি ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এবং চর আলগীর গ্রামের সেতুটি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া পূর্ব টেঁকির চরের সেতুটি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়।

চর আলগীর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সেতুটির ফলকে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের কথা লেখা থাকলেও এটি আনুমানিক এক বছর আগে নির্মাণ করা হয়। গত বুধবার ধসে পড়ার পর সেতুর ফলকটি তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অপরিকল্পিতভাবে খালটি খননের কারণেই এটি এক বছরের মধ্যে ধসে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির ভাঙা অংশে রডের পরিমাণ খুব কম। আবদুর রহিম নামের একজন বৃদ্ধ বলেন, সেতুটি ধসে পড়ায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
চর মছলন্দ গ্রামের সেতুটি আনুমানিক সাত বছর আগে নির্মাণ করা হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, গত বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে কোনো যানবাহনের চাপ ছাড়াই সেতুটির মাঝবরাবর ধসে পড়ে। এ ছাড়া সেতুর দুই পাশে ফাটল দেখা যায়। সেতুটির কাছে একটি কাঁচা সড়কের ওপর থাকায় কালভার্টও গত বুধবার ধসে পড়েছে। খাল খননের কারণে বোরাখালি খালে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটতে পারে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পূর্ব টেঁকিরচর গ্রামে সেতু ধসে পড়েছে। ২৯ মে তোলা ছবি
প্রথম আলো

পূর্ব টেঁকির চরের সেতুতে গত বছরের বর্ষায় ফাটল দেখা দেয়। সম্প্রতি একটি মাঝবরাবর দেবে পড়েছে। সেতুটির দুই পাশে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, এ এলাকায় বোরাখালি খালটির প্রস্থ অনেক বেশি হলেও সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট।  খালের দুই পাশে মাটি ভরাট করে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এ কারণে  পানির চাপে এটি ধসে পড়ছে।

গফরগাঁও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, খননের আগে বোরাখালি মরা খাল ছিল। সে হিসেবেই সেতুটি তিনটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই খালের দুই পাশে ৮ থেকে ১২ ফুট করে খনন করায় পানির চাপে সেতুগুলো ধসে পড়তে শুরু করেছে। ধসে পড়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেতু তিনটি পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যপারে পরবর্তী করণীয় তাঁরাই জানাবেন।

গফরগাঁওয়ে সেতু ধসে পড়ার খবরটি শুনেছি। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ ব্যাপারে খোঁজ নেব
মো. মুসা, নির্বাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ময়মনসিংহ কার্যালয়

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব এলাকায় আমরা খাল করেছি, সেসব এলাকার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে অনুরোধ করেছি। গফরগাঁওয়ে সেতু ধসে পড়ার খবরটি শুনেছি। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ ব্যাপারে খোঁজ নেব।’