গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিবহনশ্রমিকদের হামলা, আহত ১১

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়ক অবরোধে আটকা পড়া কুয়াকাটা এক্সপ্রেস নামের বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেপ্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে নগরের রূপাতলী হাউজিং এলাকার কয়েকটি সড়কে শিক্ষার্থীদের মেসে এসব হামলা হয়। এই হামলার ঘটনার প্রতিবাদে আজ বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের অবরোধে আটকে পড়া একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তবে যাত্রীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধরা কুয়াকাটা এক্সপ্রেস নামে অবরোধে আটকা পড়া বাসটিতে আগুন দেয়। সকাল থেকে সড়ক অবরোধের কারণে বরিশাল থেকে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা ও কুয়াকাটার অভ্যন্তরীণ পথ এবং ঢাকাসহ অন্যান্য দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে বাসশ্রমিকেরা মারধর ও লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করার জের ধরে পরিবহনশ্রমিকেরা এই হামলা চালান।

প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত চারজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে নগরীর রূপাতলীতে শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসানের মেসে হামলা করেন কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মাহমুদুলকে উদ্ধারে এগিয়ে যান পাশের বিভিন্ন মেসের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে আগত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়।

পরে ৬০ থেকে ৭০ জন পরিবহনশ্রমিক ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে রূপাতলী হাউজিংয়ের ১৮, ১৯, ২৩ ও ২৫ নম্বর রোডের মেসগুলোতেও তাণ্ডব চালান। রাত দুইটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পরিবহন শ্রমিকদের হামলায় আহত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থীদের গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়
প্রথম আলো

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের নুরুল্লাহ সিদ্দিকী, রসায়ন বিভাগের এস এম সোহানুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আহসানুজ্জামান, গণিত বিভাগের ফজলুল হক রাজীব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলীম সালেহী, বোটানি ও ক্রপ সায়েন্সের আলী হাসান, বাংলা বিভাগের মো. রাজন হোসেন এবং মার্কেটিং বিভাগের মাহবুবুর রহমান, মাহাদী হাসান ইমন, মিরাজ হাওলাদার ও সজীব শেখ। আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে (পুরুষ) চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল সাতটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে সকাল থেকে এই পথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, কুয়াকাটাসহ দক্ষিণের অন্তত ২০ পথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বন্ধ আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস বলেন, রাতে সংবাদ পেয়ে তিনি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষক-কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। আহত সব শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান আজ সকাল ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দুই পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়েছে।

পরিবহন শ্রমিকদের হামলায় আহত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থীদের গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়
প্রথম আলো

গতকাল নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিআরটিসি বাস কাউন্টারের শ্রমিকের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনায় গতকাল বেলা দেড়টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন এলাকা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী সময়ে রফিক নামের অভিযুক্ত শ্রমিককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনার জের ধরেই গতকাল গভীর রাতের হামলার ঘটনা ঘটে।