গলিত লোহা শরীরে পড়ে দুজনের মৃত্যু, দগ্ধ ৪

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় একটি রড প্রস্তুতকারক কারখানায় গলিত লোহা শরীরে পড়ে মিজানুর রহমান (৪২) ও ফাহিম (২৫) নামের দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও চারজন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় দুই শ্রমিক শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার বরপা এলাকার প্রিমিয়ার স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিল কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। মিজানুর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া এলাকার শাহজাহান মিয়ার ছেলে। ফাহিম লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাংলাবাড়ী এলাকার আকবর হোসেনের ছেলে।
এ ঘটনায় দগ্ধরা হলেন পাটগ্রাম উপজেলার বাংলাবাড়ী এলাকার আবদুস সোবহানের ছেলে শাকিল (২০), একই উপজেলার বাউরা এলাকার সুন্দর আলীর ছেলে রফিক মিয়া (৪৫), রহমতপুর এলাকার রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে রাজু (৪০), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী এলাকার টিপু শেখের ছেলে আবু সিদ্দিক (৩০)। তাঁরা সবাই ওই কারখানার ফার্নিশ বিভাগের অপারেটর ছিলেন।

আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন পেয়ে রূপগঞ্জ থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মিজানুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে যাওয়া রূপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাহিদ হাসান ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক প্রথম আলোকে জানান, বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে কারখানার একটি চুল্লিতে লোহা তৈরির জন্য ভাঙারির বান্ডিল গলানো হচ্ছিল। এ সময় বান্ডিলে থাকা কোনো একটি বস্তু বিস্ফোরিত হলে গলিত লোহা এসে শ্রমিকদের শরীরে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মিজানুরের মৃত্যু হয়। পরে মালিকপক্ষের লোকজন আহত পাঁচ শ্রমিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কাজ করার সময় দগ্ধ শ্রমিকদের গায়ে কোনো প্রকার সুরক্ষা পোশাক ছিল না বলে জানান তাঁরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, দগ্ধ হয়ে পাঁচ শ্রমিক হাসপাতালে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বিকেল চারটার দিকে ফাহিম নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শাকিল ও আবু সিদ্দিক নামের আরও দুজন শ্রমিক চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁদের শরীরের প্রায় ৯৯ ভাগ পুড়ে গেছে। বাকি দুজন শ্রমিক প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।

মিজানুরের ভাতিজা সজিবুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, গতকাল ভোর পাঁচটায় এক শ্রমিক ফোন করে তাঁর চাচা মিজানুরের মৃত্যুর খবর জানান। তারপর থেকে মালিকপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে না পেরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ কল করেন। মিজানুরের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মিজানুর প্রায় ১৫ বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করেছিলেন। আগামী মাসে বাড়ি ফিরে গিয়ে গ্রামে রড–সিমেন্টের ব্যবসা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর।
রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মিজানুরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও মালিকপক্ষের কেউ ফোন ধরেননি।