গাংনীতে ফসলি জমি কমছে দ্রুতগতিতে

অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে চাষ করতে না পেরে অনেকে বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করছেন।

কৃষিজমিতে পুকুর খনন

  • এক বছরে কৃষিজমির পরিমাণ কমেছে ৫ হাজার ৪৫২ হেক্টর।

  • যেভাবে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে, তাতে একসময় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

  • যেখানে-সেখানে পুকুর খনন করায় বিপাকে পড়েছেন আশপাশের জমিতে আবাদ করা কৃষকেরা।

  • উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় জমির মালিকেরা জমি ইজারা দিচ্ছেন।

ধানচাষ
ফাইল ছবি

এক বছরের ব্যবধানে মেহেরপুরের গাংনীতে কৃষিজমির পরিমাণ কমেছে ৫ হাজার ৪৫২ হেক্টর। এসব কৃষিজমিতে অপরিকল্পিতভাবে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে খনন করা হয়েছে পুকুর। মাটি বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর ও কৃষকেরা জানিয়েছেন, উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় জমির মালিকেরা জমি ইজারা দিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা সেখানে খনন করে মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৯টি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার ৫৬৬ হেক্টর ফসলি জমি ছিল। এ বছর জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১১৪ হেক্টরে। বর্তমানে ফসল উৎপাদন না হওয়া জমিগুলোতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমেই প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ না হওয়ার আশঙ্কা আছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে একই আবাদি জমিতে বহুমুখী শস্যের চাষ হওয়ায় ও উচ্চফলনশীল জাতের ফসল আবাদের কারণে খাদ্যে ঘাটতি নেই। তবে যেভাবে আবাদি জমির সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তাতে একসময় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

কেউ চাইলেই ইচ্ছেমতো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে।
নুর-ই-আলম সিদ্দিকী, গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)

অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, জমির মালিকেরা প্রতি বিঘা বছরে ১২ হাজার টাকায় ১০ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছেন। ইজারার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুকুর খনন করা হয়েছে। আর পুকুরের মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে যেখানে-সেখানে পুকুর খনন করায় বিপাকে পড়েছেন আশপাশের জমিতে আবাদ করা কৃষকেরা।

ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলার জোড়পুকুর গ্রামের মফিজুল ইসলামসহ সাত থেকে আটজন ব্যবসায়ী ভূমি আইন উপেক্ষা করে কৃষিজমিতে পুকুর খনন করছেন। আর এসব পুকুরের উঁচু পাড়ের কারণে পাশের নিচু জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। এতে অনেকেই চাষ না করে জমি ফেলে রাখছেন।

পুকুর খননের বিষয়ে মফিজুল ইসলাম ও হেলাল শেখ নামের দুই ব্যবসায়ী বলেন, জোড়পুকুর এলাকায় মাছের ভালো চাষ হয়। এ কারণে অনেক মানুষ এখন পুকুর খনন করে মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তাঁরা শুধু পুকুর খননের কাজ করে মাটি কিনে নিচ্ছেন। এতে সমস্যার কিছু নেই।

তবে গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, কেউ চাইলেই ইচ্ছেমতো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে। গত রোববার উপজেলার মুন্দাইল এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমিতে পুকুর খননের কারণে আশপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

লিয়াকত মিয়া নামের এক কৃষক বলেন, আশপাশে পুকুর থাকায় তাঁর দুই বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সেখানে তিনি কোনো আবাদ করতে পারছেন না।

অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমিতে পুকুর খননের বিষয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মুনসুর আলম বলেন, কৃষিজমির শ্রেণি ঠিক রেখে পুকুর খননে সমস্যা নেই। তবে পুকুরের মাটি ইটভাটায় বিক্রি নিয়ে সমস্যা আছে। ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন যাতে না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসন কাজ করছে। এ ছাড়া শুধু মেহেরপুরে নয়, সারা দেশেই ২ শতাংশ হারে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। আবাসনসহ নানা কারণে জমির পরিমাণ কমছে।