গাইবান্ধা পৌরসভা: চার কারণে আ.লীগের প্রার্থীর ভরাডুবি

মতলুবর রহমান
প্রথম আলো

গাইবান্ধা পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে হটিয়ে বিজয়ী হয়েছেন একই দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মো. মতলুবর রহমান। এই নির্বাচনী ফলাফলের বিষয়ে অনেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। বেশ কিছু কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে বলে দলীয় নেতা–কর্মী ও ভোটাররা মনে করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মূলত চার কারণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জিততে পারেননি। নির্বাজনী প্রচার–প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের নিষ্কিয়তা, দলীয় প্রার্থীকে নেতা–কর্মীদের অসহযোগিতা, এক দল থেকে চারজন বিদ্রোহী প্রার্থীর অংশ নেওয়ায় ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়া এবং মেয়র থাকাকালীন কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে না পারা।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গাইবান্ধা পৌরসভা নির্বাচন ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে গাইবান্ধা শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মতলুবর রহমান ১২ হাজার ৩৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিষ্কৃত সদস্য আনোয়ারুল সারওয়ার পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৭০ ভোট। মতলুবর ৪ হাজার ৪২৮ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। ফলাফলে তৃতীয় হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির। তিনি পেয়েছেন ৭ হাজার ৩০১ ভোট, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মতলুবর রহমান পাঁচ হাজার ৯৭ ভোট বেশি পেয়েছেন।

আনোয়ারুল সারওয়ার
প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের ফল বিপর্যয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর বিজয় নিয়ে দলীয় নেতা–কর্মীরা নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এ বিষয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর জামান বলেন, গত পাঁচ বছর শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পৌরসভার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। তাঁর সার্বিক উন্নয়নে ব্যর্থতা ছিল। এ ছাড়া দলীয় নেতা–কর্মীদের একত্র করতে সমন্বয়হীনতার অভাব ছিল। ফলে নেতা–কর্মীদের বিশাল একটি অংশ দলীয় প্রার্থীকে অসহযোগিতা করেন। তাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে পরোক্ষভাবে কাজ করেন। এসব কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে নেতা–কর্মীরা তাঁর পক্ষের প্রচার–প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন না। সক্রিয়ভাবে তাঁর পক্ষে কেউ কাজও করেননি। ফলে দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহর আওয়ামী লীগ আরেক নেতা বলেন, একই দলের (আওয়ামী লীগ) চারজন নেতা এবার বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী হন। মতলুবর রহমান ও আনোয়ারুল সারওয়ার ছাড়াও এবার জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ফারুক আহম্মেদ ও আহসানুল করিম মেয়র প্রার্থী হন। ফলে দলীয় ভোট ভাগাভাগি হয়ে যায়। এ কারণে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় ঘটে।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, মতলুবর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির কারণে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন। ফলে জনগনের ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।

শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির
প্রথম আলো

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক মণ্ডল বলেন, ‘দলীয় নেতা–কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি। কিছু নেতা–কর্মী কাজ করলেও তাঁদের মধ্যে তেমন গতি ছিল না। এটা মতলুবরের জন্য প্লাস পয়েন্ট ছিল। পক্ষান্তরে বিদ্রোহী প্রার্থী মতলুবর রহমান ও তাঁর কর্মী–সমর্থকদের কাজে যথেষ্ট গতি ছিল। এসব কারণে তিনি বিজয়ী হতে পেরেছেন।’
বিজয়ী মেয়র মতলুবর রহমান বলেন, ‘গত পাঁচ বছর গাইবান্ধা পৌরসভার প্যানেল মেয়র হিসেবে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। বন্যা ও করোনায় মানুষকে সহায়তা দিয়েছি। এবারের নির্বাচনে আমি নতুন মুখ। আমার কোনো ক্রটি নেই। এ ছাড়া পেশায় আমি ঠিকাদার। ভালো ঠিকাদার হিসেবেও এলাকায় আমার সুখ্যাতি রয়েছে।’
বিজয়ী মেয়র প্রার্থী আরও বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে বুকে ধারণ করি। তাঁর আদর্শে আগামীর পথ চলি। এই পথ চলাকে সুগম করতে কাউন্সিলিং করি। কাউন্সিলিং করে সফল হই। ফলে জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। এখান থেকে আমার আগ্রহ জাগে মেয়র হয়ে কাজ করতে। এসব কারণে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হতে পেরেছি।’
পৌরসভা নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।