গাইবান্ধা-৩ উপনির্বাচন: নিজের ভোট নিজে দিতে চান তরুণেরা

গাইবান্ধা
গাইবান্ধা

২১ মার্চ গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ী) আসনের উপনির্বাচন। আর ১১ দিন বাকি। এখন তাই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা উত্তুঙ্গে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জাসদের চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে তাঁরা সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ছেন। ফিরছেন গভীর রাতে। চষে বেড়াচ্ছেন এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়ন।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের ইউনুস আলী সরকার। ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১১ হাজার ৮৫৪ জন। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৩৫৭ জন এবার নতুন ভোটার। আর মোট ভোটারের ৩০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। ফলে জয়-পরাজয়ে এ তরুণ ভোটারদের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।

প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে এ তরুণ ও নতুন ভোটারদের অধিকাংশই জানিয়েছেন, তাঁরা ভোট দিতে গিয়ে গত একাদশ সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে চান না। তাঁরা নিজের ভোট এবার নিজে দিতে চান। তাঁরা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও এলাকার উন্নয়নে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চান।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, গণসংযোগের সময় প্রার্থীরা তাঁদের প্রতীকসংবলিত লিফলেট বিতরণ করছেন। দুই উপজেলা শহর ও হাটবাজারে চলছে মাইকে প্রচার। চার প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। এই বাস্তবতায় তরুণ ও নতুন ভোটাররা কেমন ভোট চান, কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন, তা জানতে গাইবান্ধা-৩ আসনের কয়েকজন তরুণ ও নতুন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়।

সাদুল্যাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন ভোটার আবুল কালাম (১৯) বলেন, ‘এবারই প্রথম ভোট দেব। কারও কথায় কিংবা প্রতিশ্রুতিতে ভুলে ভোট দেব না। তবে যে প্রার্থী সৎ, চরিত্রবান ও শিক্ষিত, তাঁকেই ভোট দেব।’

সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার সোলায়মান সরকার (২১) বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অনেক প্রার্থী ধাপেরহাটে ট্রমা হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু অদ্যাবধি ট্রমা হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়নি। তাই এবার কারও প্রতিশ্রুতিতে নয়, দেখে–শুনে ভোট দেব।’

পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার রফিকুল ইসলাম (২০) বলেন, ‘একাদশ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে সিল মেরে বাক্স ভরে রাখার কথা শুনেছি। এ ছাড়া ভোটের দিন অনেকে কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন, তাঁর ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। এ উপনির্বাচনে সে রকম পরিবেশ যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা করা উচিত।’

এ আসনের প্রায় ৪০ জন তরুণ ভোটারের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো কমবেশি একই ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উম্মে কুলসুম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আমি নির্বাচিত হলে আসনটিকে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসতে পারব।’ তরুণদের ট্রমা হাসপাতাল নির্মাণের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সংসদে কথা বলব।’

বিএনপির প্রার্থী মইনুল হাসান সাদিক বলেন, ‘বিগত দিনে আওয়ামী সরকারের আমলে দুই উপজেলার কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বেকার যুবক তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব।’

জাসদের প্রার্থী খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘এ আসনে সব প্রার্থীর চেয়ে আমার বয়স অনেক কম। এ ক্ষেত্রে তরুণদের সমর্থন পাব বলে আশা করছি। নির্বাচিত হলে তরুণদের উন্নয়নে কাজ করব।’

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মইনুল রাব্বী চৌধুরী বলেন, ‘তরুণদের মতামতের সঙ্গে আমি একমত। ভালো প্রার্থী নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন হবে।’