গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে কেউ নিয়ম মানছে না

দোকানপাট খোলা। মানুষের সমাগম। সবকিছুই যেন স্বাভাবিক। মাদারগঞ্জ রোড, সাদুল্যাপুর উপজেলা শহর, গাইবান্ধা, ৯ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো
দোকানপাট খোলা। মানুষের সমাগম। সবকিছুই যেন স্বাভাবিক। মাদারগঞ্জ রোড, সাদুল্যাপুর উপজেলা শহর, গাইবান্ধা, ৯ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাস নিয়ে দেশের যে পাঁচটি স্থানে ঝুঁকি বেশি, তার একটি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর। কিন্তু এই উপজেলার কেউ নিয়ম মানছে না। উপজেলা শহরে ঢোকার পথে নেই কড়াকড়ি। শহরের অনেক দোকানপাট খোলা। ফলে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটার উদ্বেগ মাথায় নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা শহর ঘুরে দেখা গেছে, মোড়ে মোড়ে মানুষের আড্ডা। চায়ের স্টলে ভিড়। অনেকে হোটেল-রেস্তোরাঁয় অবলীলায় সকালের নাশতা করছেন। অনেক দোকানপাটও খোলা। বিশেষ করে উপজেলা শহরের কাঁচাবাজার, হাসপাতাল রোড, মাদারগঞ্জ রোড, ভাতগ্রাম রোড, নলডাঙ্গা রোড ও কলেজ রোডে মানুষের ভিড় বেশি। কেউ কেনাকাটা করছেন, কেউ ঘোরাফেরা করছেন।

সকালে শহরের কাঁচাবাজার এলাকায় দেখা হয় উপজেলা শহরের জয়েনপুর এলাকার বাসিন্দা এনজিওকর্মী শামীয়ূর রহমানের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘কী বলব? আমরা বড় অসহায়। শান্ত উপজেলা সাদুল্যাপুর। এখানে বিয়ের নিমন্ত্রণে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী দুজন। তাঁরা করোনা পজিটিভ। তাঁদের সংস্পর্শে আসা আরও তিনজনের দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। এখন গোটা জেলা করোনা-আতঙ্কে রয়েছে। তারপরও মানুষ বিষয়টির কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে আমরা প্রবল ঝুঁকির মধ্যে আছি।’

স্থানীয় কলেজশিক্ষক মাহমুদুল হক বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ থাকা দেশের পাঁচটি হটস্পটের একটি সাদুল্যাপুর। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখান থেকে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটার খুবই ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা লক্ষণীয়। মানুষ শহরে অবাধে চলাচল করছে। ঘরে থাকা ও জরুরি প্রয়োজনে বের হলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি নির্দেশ মানছে না। অসচেতন এসব মানুষ নিজেদের বিপদগ্রস্ত করছে, অন্যদেরও ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।

উপজেলা শহরের কলেজ রোড এলাকায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তাজুল ইসলামের। তিনি বলেন, উপজেলা শহরে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে প্রশাসনের লোকজনের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। বাধা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। ফলে একদিকে শহরের ভেতরে লোকজন ঘোরাফেরা করছে, অন্যদিকে বাইরের লোকজন শহরে প্রবেশ করছে। দেখে মনে হয় না, এই শহরে লকডাউন বলে কিছু আছে।

তবে সাদুল্যাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নবী নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা শহরে লোকজনের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তারপরও যুবক শ্রেণির কিছু মানুষ শহরে ঘোরাফেরা করছেন। আর বাইরের লোকজনের প্রবেশ ঠেকাতে উপজেলা শহরের প্রবেশপথে বাধা দিতে পুলিশকে বলা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহরিয়া খান বলেন, পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। প্রতিদিন মাইকিং করে দোকানপাট বন্ধ রাখা, একাধিক মানুষ গণজমায়েত এড়ানো, নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই এসব পরামর্শ মানছে না। এতে উপজেলায় করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটার মারাত্মক ঝুঁকি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আগামীর দিনের অবস্থা হবে ভয়াবহ।’

গত ১১ মার্চ সাদুল্যাপুর উপজেলার হবিুল্যাপুর গ্রামে এক বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী মিলে ৫ শতাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। তাদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা দুই আত্মীয়ও। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অনেকে ২১ মার্চ গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের উপনির্বাচনে ভোট দেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ওই দুজন পরে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছেন। ২২ মার্চ ওই দুজনের করোনা ‘পজিটিভ’ ধরা পড়ে। তাঁদের সংস্পর্শে আসা আরও দুজনের দেহে করোনা শনাক্ত হয় ২৭ মার্চ। ৪ এপ্রিল উপজেলার আরও একজনের করোনা ‘পজিটিভ’ হয়। এই পাঁচজনের মধ্যে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে তিনজন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন এবং সাদুল্যাপুরে হোম আইসোলেশনে একজন রয়েছে।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এ বি এম আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত গাইবান্ধায় মোট পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা উন্নতির দিকে। জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়কে আইসোলেশনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

হোম কোয়ারেন্টিনে ১৬৭ জন: গাইবান্ধায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৬৭ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হওয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে।