গাছ লাগিয়েও ঠেকানো গেল না জবরদখল

গাছ ধ্বংস করে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী দোকানপাট। ৪ অক্টোবর তোলা
ছবি: প্রথম আলো

বারবার উচ্ছেদ অভিযানেও দখলমুক্ত রাখা যাচ্ছিল না পাবনা-ঢাকা মহাসড়কসংলগ্ন বেড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা। তাই কৌশল করেছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। সেই জায়গায় ঢাকঢোল পিটিয়ে গাছ লাগিয়েছিল তারা। লাভ হয়নি। দখলদারেরা উৎসব করে সেখানে দোকানপাট বসিয়েছেন। অর্ধেক গাছের চারা মরে গেছে। বাকিগুলো মরার পথে।

সওজ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের জায়গা দখল করে দোকানপাট গড়ে ওঠায় দীর্ঘদিন ধরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছিল। প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে সওজ প্রায়ই সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও স্থায়ীভাবে তা দখলমুক্ত করা যাচ্ছিল না। দখলমুক্ত হওয়ার এক মাস যেতে না যেতেই সেই জায়গা আবার দখল হয়ে যাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে সওজ উদ্ধার করা জায়গায় বৃক্ষরোপণের সিদ্ধান্ত নেয়।

দু-এক মাস আগে সওজ বেড়া বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব দিকের বেশ কিছুটা অংশে অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে শতাধিক বৃক্ষরোপণ করা হয়। তবে বৃক্ষরোপণ করা হলেও জায়গাটি ঘিরে দেওয়া হয়নি। বৃক্ষরোপণে বেড়া উপজেলা প্রশাসন ও সওজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সে সময় বেশ কয়েকটি গাছের চারার সঙ্গে বৃক্ষরোপণে অংশ নেওয়া কর্মকর্তার নামও টাঙিয়ে দেওয়া হয়। দুই-তিন সপ্তাহ এভাবেই গাছের চারাগুলো বেড়ে উঠতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই আবার শুরু হয় দখলের উৎসব।

গত এক-দেড় মাসে ওই জায়গার অর্ধেকের বেশি দখল করে বসে গেছে ১৫-২০টি দোকানঘর। গাছের চারা ঘেঁষে টংঘর ও অস্থায়ী দোকানঘর বসানোয় এরই মধ্যে অর্ধেক চারা মারা গেছে। বাকিগুলো অর্ধমৃত। এ ছাড়া সেখানে শিগগিরই স্থায়ী দোকানপাট গড়ে তোলার প্রস্তুতি চলছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দখলদার জানিয়েছেন।

গত আগস্টে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর লাগানো গাছের চারা
ছবি: প্রথম আলো

৪ অক্টোবর সরেজমিন দেখা যায়, ওই জায়গায় গড়ে উঠেছে রিকশা মেরামত, ভাঙারি, চা-পানের দোকান, গ্যারেজ ও অন্যান্য স্থাপনা। দু-এক মাস আগে লাগানো গাছের চারার প্রায় অর্ধেকই মরে গেছে। দখলদার আশরাফুল হোসেনসহ চার-পাঁচজন বলেন, উচ্ছেদের আগেও এই জায়গাতেই তাঁদের দোকানপাট ছিল। আর জায়গাটি যে সওজের, তা তাঁরা সবাই জানেন। অন্য কোথাও দোকানের জায়গা না পেয়ে তাঁরা বাধ্য হয়ে আবার ফিরে এসেছেন বলে জানান। তবে সওজ দখল ছেড়ে দিতে বললে তাঁরা ছেড়ে দেবেন। এ ছাড়া তাঁরা গাছের চারার কোনো ক্ষতি করছেন না বলে দাবি করেন।

উপজেলার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দখলমুক্ত করে সওজ বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নেওয়ায় ভেবেছিলাম জায়গাটি বুঝি স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত হলো। কিন্তু তারা (সওজ) ঘিরে না দেওয়ায় জায়গাটি আবার দখল হয়ে গেছে। বছর তিনেক আগে সওজ বেড়ার কাশিনাথপুর বাসস্ট্যান্ডের প্রায় আড়াই বিঘা জমি দখলমুক্ত করে প্রথমে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দিয়েছিল। এরপর সেখানে বৃক্ষরোপণ করায় সেই জায়গা দখলমুক্ত আছে। কাজেই শুধু বৃক্ষরোপণ করলেই হবে না, জায়গাটি ঘিরে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

সওজের পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জোহা বলেন, ‘আমাদের ওই জায়গার সঙ্গে জেলা পরিষদেরও কিছু জায়গা আছে। জেলা পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে পুরো জায়গাটি আমরা ঘিরে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। জায়গা ঘিরে দেওয়ার পর প্রয়োজনে আবার বৃক্ষরোপণ করা হবে।’