গাছে উঠে কাঁঠাল পাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হজরত বিবি খাদিজা হলের সেই কাঁঠাল গাছ। মঙ্গলবার দুপুরে হলের পেছনে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) হজরত বিবি খাদিজা হলের সীমানাপ্রাচীরের ভেতরের একটি গাছে উঠে কাঁঠাল পাড়ার অভিযোগে দুই ছাত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।

২১ জুন সকালে ওই কাঁঠাল পাড়ার ঘটনা ঘটে। ২২ জুন হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই ছাত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার অভিযুক্ত দুই ছাত্রী ভুল স্বীকার করে নোটিশের জবাব দিয়েছেন।

হল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২১ জুন বিবি খাদিজা হলের সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে দুটি কাঁঠালগাছে উঠে কাঁঠাল পাড়েন দুই ছাত্রী। তাঁরা ওই কাঁঠাল বস্তায় করে নিয়ে যান। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ২২ জুন অভিযুক্ত দুই ছাত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে দুই ছাত্রীকে ২৬ জুন বিকেল ৪টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।

হল প্রাধ্যক্ষ গাজী মো. মহসিন স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, আগেও গাছ থেকে কাঁঠাল, কামরাঙা, পেয়ারা ইত্যাদি খোয়া গেছে। কিন্তু কাউকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। সরকারি সম্পদ বিনা অনুমতিতে নিয়ে যাওয়া আইনসংগত নয়। এ ছাড়া গাছে উঠে কাঁঠাল পাড়ার সময় গাছ থেকে পড়ে দুর্ঘটনা কিংবা প্রাণনাশের শঙ্কা ছিল। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা হল কর্তৃপক্ষ বিপদে পড়তে পারত। হল আইনবিরোধী এই কর্মকাণ্ডে জন্য কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে না, তা হল দপ্তরে লিখিতভাবে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।

হল প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ের দুই দিন পর তাঁরা আজ হল প্রাধ্যক্ষের দপ্তরে নোটিশের জবাব দেন। তাঁরা আবেগের বশবর্তী হয়ে গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়েছেন বলে স্বীকার করেন। সেই সঙ্গে প্রশাসনকে বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন।

তবে হলে অবস্থানকারী একাধিক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে হল প্রশাসনের কারণ দর্শানোর এই নোটিশের সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলছেন, এভাবে নোটিশ না দিয়ে হল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত দুই ছাত্রীকে সতর্ক করতে পারত। কিংবা হলে অবস্থানকারী সবার উদ্দেশে একটি সতর্কতামূলক নোটিশ দিতে পারত। তা না করে যেভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়ে নোটিশে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, তাতে ছাত্রীদের অপমান করা হয়েছে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কাঁঠালগাছের প্রায় ১২-১৫ ফুট উঁচুতে কাঁঠালের বোঁটার ছেঁড়া অংশ। সেখানে ছোট একটি কাঁঠালও আছে। হলের একজন কর্মকর্তা বলেন, ছাত্রীরা গাছ বেয়ে উঠে কাঁঠাল পেড়েছেন, যা করতে গিয়ে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

হলের প্রাধ্যক্ষ গাজী মো. মহসিন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের গাছের ফল খাওয়ার অধিকার ছাত্রীদের আছে। তাঁরা তাঁদের বললে তাঁরা ফল পেড়ে তাঁদের খেতে দিতে পারেন। কিন্তু তা না করে নিজেরা গাছে উঠে যেভাবে কাঁঠাল পেড়েছেন, তাতে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। তাই তাঁদের সতর্ক করার জন্যই নোটিশটি দেওয়া হয়েছে। যার জবাবও আজ তাঁরা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. দিদার-উল-আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি কেবলই শুনেছেন। হল কর্তৃপক্ষ হয়তো নোটিশ দিয়ে বিষয়টি নিজেরাই সমাধান করতে চেয়েছে। এর আগেও সম্ভবত এমন ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রীরা এ ধরনের দুঃসাহসিক কাজ করতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে তখন সবাই কর্তৃপক্ষকে দোষ দেবেন। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানান।