মানিকগঞ্জে গাজর চাষে সচ্ছলতা ফিরছে

এই উপজেলায় এ বছর ১ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে গাজরের আবাদ হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন।

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় খেত থেকে গাজর তুলছেন চাষিরা। গত সোমবার সকালে চর দুর্গাপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার চর আজিম গ্রামের চাষি আমির খানের (৬০) দিন চলত অভাব-অনটনে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুঃসহ জীবন যাপন করতেন তিনি। তবে তাঁর দিন পাল্টে গেছে। গাজর চাষে সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। তিন ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন। এক ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। বাড়িতে থাকার বড় বড় ঘরও করেছেন, জমিও কিনেছেন।

গত সোমবার সকালে খেত থেকে গাজর তুলে বাড়িতে নিয়ে আসেন আমির খান। দুপুরে বাড়ির সামনে শ্রমিকদের সঙ্গে তিনিও গাজর পরিষ্কার করেন। এ সময় কথা হলে তিনি জানান, প্রায় এক যুগ ধরে গাজরের আবাদ করছেন তিনি। শুরুতে নিজের অল্প জমিতে গাজরের চাষ শুরু করেন। লাভবান হওয়ায় ধীরে ধীরে তাঁর আবাদ বাড়তে শুরু করে। এ বছর তিনি ৩১ বিঘা জমিতে গাজর আবাদ করেছেন। এর মধ্যে তাঁর নিজের পাঁচ বিঘা ও ভাড়া নেওয়া অন্যের ২৬ বিঘা জমি রয়েছে। ২০ বিঘা জমির গাজর বিক্রি করেছেন। ফলন ও দাম—দুটিই ভালো পেয়েছেন।

আমির খানের মতো চর আজিমপুর গ্রামের শহীদ খান, চর দুর্গাপুর গ্রামের জায়েদ আলী ও আক্কাস আলী, পশ্চিম ভাকুম গ্রামের জালাল শিকদার ও সুরুজ ব্যাপারী, জয়মণ্ডপ গ্রামের গোলাম নবীসহ অনেকেরই গাজর চাষে দিন বদলে গেছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, সিঙ্গাইরে গাজর চাষে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন কৃষকেরা। উৎপাদন ও ফলন ভালো হওয়ায় শীতকালীন এই সবজি চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তাঁরা। গাজর চাষে কৃষকদের সাফল্যের কারণে দিন দিন এই সবজির আবাদ বেড়েই চলেছে। মূলত মান ও স্বাদের ভিন্নতার কারণে এখানকার গাজরের সুনাম রয়েছে।

প্রায় দুই যুগ ধরে গাজরের আবাদ করছেন চর দুর্গাপুর গ্রামের জায়েদ আলী। তিনি বলেন, অন্য সবজির চেয়ে গাজর চাষে শ্রম কম দিতে হয়। আবাদ ও দাম—দুটিই ভালো পাওয়ায় যায়। এবার তিনি সাত বিঘা জমিতে গাজর আবাদ করেন ও তা বিক্রিও করেছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা খেত থেকে তাঁর গাজর কিনে নিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, এই উপজেলার মাটি ও জলবায়ু গাজর চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ বছর ১ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে গাজরের আবাদ করা হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন। এই উপজেলায় মূলত ওরেঞ্জ কিং জাতের গাজরের আবাদ হয়ে থাকে। সরকারিভাবে এই জাতের বীজের সরবরাহ হয় না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে জাপান থেকে এ জাতের বীজ আমদানি করা হয়ে থাকে।

তবে গাজর চাষে চাষিদের কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। গাজরের বীজ ও প্রয়োজনীয় হিমাগারের অভাব রয়েছে। দেশে গাজরের বীজ উৎপাদন না হওয়ায় বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। এতে বিক্রেতাদের কাছ থেকে অধিক মূল্যে গাজরের বীজ কিনতে হয়। এ ছাড়া কখনো কখনো বীজের স্বল্পতাও দেখা দেয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান বলেন, এ উপজেলায় তিন হাজারের বেশি চাষি গাজরের আবাদ করে থাকেন। তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। গাজর চাষে তাঁরা চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এতে উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় চাষিদের মধ্যে সচ্ছলতা ফিরেছে।