গাজীপুরের চন্দ্রায় উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের চাপ

বাস–মাইক্রোবাস যা পাচ্ছেন, তাতে করেই মানুষ বাড়ি ছুটছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় আজ সোমবার সকালে
প্রথম আলো

চার সন্তানের জননী আমেনা খাতুন (৪০)। যাবেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের বাড়িতে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে সাতটায় কথা হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায়।

করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কেন বাড়ি যাচ্ছেন? জানতে চাইলে আমেনা বলেন, ‘করোনা তো এক বছর অইয়্যা গেল। করোনা আমাগারে ছারবো না। ছ্যাওয়াল–মেয়ে বাড়িত। ঈদেও যদি বাড়িত না যাই, তাইলে কবে যামু। মরলি ছ্যাওয়াল-পাওয়াল লিয়া মরব।’

ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মো. শামিম হোসেন যাবেন রংপুরে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক দিন হলো বাড়ি যাই না। সামনে ঈদ, তাই মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। সরকার নিষেধ করেছে, তারপরও কী করব বলেন, ঈদ বলে কথা। একটু ঝুঁকি হলেও বাড়ি যাচ্ছি। ভাড়াও অনেক বেশি। মাইক্রোবাসে সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় পর্যন্ত ৭০০ টাকা আর বাইকে চাচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা।’

অন্যান্য ঈদের মতোই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় আজ ভোর থেকেই ছিল ব্যাপক যানবাহনের চাপ। যানবাহনের চাপের কারণে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে কবিরপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। এই যানজট ছিল উত্তরবঙ্গে যাওয়ার দিকে।
ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস—যে যেভাবে পারছেন ছুটে চলেছেন। কারও মধ্যেই সরকারি বিধিনিষেধ ও করোনা মারামারির ভয় যেন নেই। বাড়ি ফেরার জন্য অঘোষিত এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। একই সুযোগে ছোট ছোট পরিবহনের চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নিচ্ছেন।

চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিকআপ ও ট্রাকে উঠে পড়েন। তবে বেশির ভাগ মানুষ মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল ভাড়া করে রওনা হন। অনেকে পরিবার–পরিজন নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছেন।

একসময় চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় এসে গাড়ির জটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা যাত্রীদের কাছে এটি পরিচিত হয়ে উঠেছিল। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার এটি। কোনো ঈদে ঘরমুখী মানুষ চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যানজটে আটকা পড়ে নাজেহাল হননি, এমন ঘটনা প্রায় বিরল। শুধু ঈদের সময় নয়, বছরের প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো সময় এ মোড়ে জট লেগে থাকত। কিন্তু এবার সেই চিত্র নেই। তবে আজ ভোর থেকে আছে মানুষের জট। এখানে থাকা বেশির ভাগ মানুষই খেটে খাওয়া শ্রমিক। এ ছাড়া আছে যাঁদের কোনো কাজ নেই।

চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় কথা হয় বিনিময় পরিবহনের চালক আশরাফ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, যাত্রী নিয়ে তাঁরা টাঙ্গাইল পর্যন্ত যাচ্ছেন। এর বেশি যাচ্ছেন না। টাঙ্গাইল পর্যন্ত বাসে ৩০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার আজ সোমবার সকালের দৃশ্য
প্রথম আলো

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বুনারপার এলাকায় বাসিন্দা আরিফুল শাওন বলেন, তিনি সাভার থেকে চন্দ্রায় এসেছেন বাসে করে। এখান থেকে গাইবান্ধা যাবেন। কীভাবে যাবেন গাড়ি তো নেই—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যবস্থা হয়ে যাবে। গাড়ি না পেলে ট্রাকে উঠে চলে যাব।’ কিছুক্ষণ পর তিনি দৌড়ে একটি ট্রাকে উঠে পড়েন। তাঁর মতো আরও ১০ থেকে ১২ জন ঘরমুখী মানুষ দৌড়ে ওই ট্রাকে উঠে যান।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে যানবাহন খুবই কম। আজ বিকেল থেকে কিছু চাপ বাড়ার আশঙ্কা আছে। এ বিষয়ে জেলা পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে ৬২৬ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।