গারোদের জমিতে লেক খনন প্রকল্প নিয়ে আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে মধুপুর

টাঙ্গাইলের মধুপুরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জমিতে লেক খননের প্রতিবাদে ‘সম্মিলিত আদিবাসী জনতা’র ব্যানারে এর আগে সমাবেশ করা হয়
ফাইল ছবি

টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী গারোদের জমিতে বন বিভাগের লেক খনন প্রকল্প বাতিলের দাবিতে আবারও আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। বন বিভাগ বলছে, ওই জমি গারোদের নয়। তারা সেখানে লেক খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। অন্যদিকে যেকোনো মূল্যে লেক খনন প্রকল্প প্রতিহত করবে বলে জানিয়েছে গারোরা। এ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে বনাঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ও বন বিভাগ।

আজ রোববার বনাঞ্চলের ভুটিয়া গ্রামে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচির জন্য সভা করেছেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন। আন্দোলনের সংগঠক জন জেত্রা জানান, প্রতিটি গারো গ্রামে জনসংযোগ ও সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে মহাসমাবেশসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বনাঞ্চলের আমতলী বাইদ এলাকায় ৪৫ বিঘা জমিতে ১৩টি গারো পরিবার বংশপরম্পরায় চাষাবাদ করছে। বন বিভাগ সেখানে ‘স্থানীয় ও ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তায় মধুপুর জাতীয় উদ্যানের ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীন ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে লেক খননের উদ্যোগ নেয়। গত ২২ এপ্রিল বন বিভাগ ওই জমিতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা। রাতের আঁধারে কে বা কারা সাইনবোর্ডটি ভেঙে ফেলে। এ ঘটনায় বন বিভাগ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর তিন নেতার নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করে এবং আবারও সেখানে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। এ ঘটনায় গত ২৫ এপ্রিল বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা।

বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের (বাগাসাস) কেন্দ্রীয় সভাপতি জন জেত্রা বলেন, এই জমি স্থানীয় গারো জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বংশপরম্পরায় চাষাবাদ করে আসছেন। জমিতে লেক খননের উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বন বিভাগ গারোদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর প্রতিবাদে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছেন। যেকোনো মূল্যে তাঁরা লেক খনন প্রকল্প প্রতিহত করবেন।

আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, ‘আমরা উন্নয়নবিরোধী নই। কিন্তু যে উন্নয়ন আমাদের জীবন-জীবিকার ওপর আঘাত হানে, আমাদের অস্তিত্ব বিলীনের দিকে ঠেলে দেয়, সেই উন্নয়ন যেকোনো মূল্যে আমরা প্রতিহত করতে প্রস্তুত।’

লেক খনন প্রকল্পের ওই এলাকার ১৩ জন জমির মালিকের একজন চুনিয়া গ্রামের মুকুল দারু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শত বছর আগে থেকে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই জমি চাষবাস করছেন। ওই জমিতে পূর্বপুরুষদের রক্ত-ঘামের গন্ধ আছে। আমাদের আয়–উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম এই জমি। তাই এখানে লেক খনন আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না।’

টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান প্রথম আলোকে, ওই জমি বন বিভাগের। যাঁদের দখলে আছে, তাঁরা জমির মালিক নন। তারপরও তাঁদের জেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। লেক খননে সহায়তা করলে তাঁদের সামাজিক বনায়নে সম্পৃক্ত ও লেক খনন হওয়ার পর সেখানে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে মাছ চাষে সম্পৃক্ত করা হবে।

সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হুদা প্রথম আলোকে, লেক খনন প্রকল্পকে কেন্দ্র করে বন বিভাগের সঙ্গে স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিরোধ জটিল হচ্ছে। এর আগেও ২০০৪ সালে ইকো পার্ক প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বন বিভাগের বিরোধ দেখা দিয়েছিল। তখন পুলিশের গুলিতে এক গারো যুবক নিহত হন। তাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।