গুরুদাসপুরে কলেজছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, কর্মচারী গ্রেপ্তার

এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জাকির হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

নাটোরের গুরুদাসপুরে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে একটি কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বিরুদ্ধে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের শৌচাগারে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে কলেজের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। বিক্ষোভ-মিছিল করেন। এ সময় শিক্ষক-কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে উপজেলা প্রশাসন গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

ঘটনার পরপরই চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে জাকির হোসেনকে। পাশাপাশি নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনে মামলা দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

নিপীড়নের শিকার ছাত্রীটির বরাত দিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাইদ বলেন, ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকদের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে কলেজের রেজিস্ট্রি খাতায় তা সংরক্ষণের দায়িত্ব ছিল কলেজের পিয়ন জাকির হোসেনের ওপর। জাকির হোসেন বিভিন্ন সময় ওই ছাত্রীকে নানাভাবে প্রলোভন দিয়ে উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা সতর্ক করা হয় জাকিরকে। সর্বশেষ গতকাল সকালে ওই ছাত্রী কলেজে এসে শৌচাগারে যায়। এ সময় সেখানে গিয়ে ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করেন পিয়ন জাকির। ওই ছাত্রী শৌচাগার থেকে বের হয়ে সহপাঠীদের বলার পর মুহূর্তের মধ্যে অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। এতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস।

এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের খবর ছড়িয়ে পড়লে এম হক ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক–কর্মকর্তাদের অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নামে
ছবি: প্রথম আলো

নিপীড়নের শিকার ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, বেশকিছু দিন ধরে তাঁর মেয়েকে মুঠোফোনে ও কলেজে অনৈতিক প্রস্তাবসহ উত্ত্যক্ত করছিলেন জাকির। বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষকে বলার পরও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ কারণে নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে তাঁর মেয়েকে। অভিযুক্ত ব্যক্তির শাস্তি দাবি করেন তিনি।

ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনার পরিস্থিতি সামাল দিতে কলেজে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তমাল হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রাসেল ও এক দল পুলিশ। তাঁরা গিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের মুক্ত করার পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে বসেই নিপীড়নের শিকার ছাত্রীটির বক্তব্য শুনে অভিযোগ আমলে নিয়ে নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনে একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। নিপীড়নের শিকার ছাত্রী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলায় কলেজের পিয়ন জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাঁকে নাটোর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে । জাকিরের বিরুদ্ধে এ রকম আরও তিনটি অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউএনও তমাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরিচালনা কমিটির সভা ডেকে ওই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে। আদালত বিচার করবেন।

তবে কারাগারে পাঠানোর আগে অভিযুক্ত পিয়ন কর্মচারী জাকির হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তিনি পরিস্থিতির শিকার। বিগত ইউপি নির্বাচনের রেশ তাঁর ওপর উতোর–চাপানো হয়েছে। তিনি বিবাহিত। তাঁর ৬ বছর ও ১২ বছর বয়সী দুই ছেলে রয়েছে।