গৃহকর বৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ

  • হোল্ডিংধারীর সংখ্যা ৩৬ হাজার ৫০০। গৃহকরের ব্যাপারে আপত্তি দিয়েছেন ২২ হাজার ৪০০ হোল্ডিংধারী ব্যক্তি।

  • আপত্তি দেওয়ার শেষ তারিখ ২০ জুন। গতকাল পর্যন্ত ১২ হাজার আপত্তির শুনানি হয়েছে।

ফরিদপুর জেলার মানচিত্র

ফরিদপুর পৌরসভায় গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) বৃদ্ধি নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, অতিরিক্ত কর ধার্য করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ গুণ পর্যন্ত কর বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে গৃহকর আপত্তির বিষয়ে পৌরসভায় শুনানি অব্যাহত রয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম মেনে কয়েক বছর আগেই গৃহকর বাড়ানো হয়েছিল। তবে করোনাসহ বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কর কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এ সম্পর্কে পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, সাত বছরের মধ্যে পৌর কর বাড়েনি। এখন যে করের আপত্তি নিষ্পত্তি করা হচ্ছে, এই কর ধার্য করা হয়েছে আগের মেয়রের সময়ে (গত ১০ ডিসেম্বর পৌরসভার নির্বাচনে তিনি জয়ী হন)। আপত্তি শুনানিতে ৩০ ভাগ কর কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই তাঁর কাছে আপত্তি নিয়ে আসছেন। সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কর কমে যাচ্ছে। কিন্তু পৌরসভা চালাতে হলে কর বাড়াতেই হয়। এবার বাড়ানো হলে আগামী পাঁচ বছর আর নতুন করে কর বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না।

পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনাসহ বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কর কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ফরিদপুর পৌরসভা ১৮৬৯ সালে গঠিত হয়। বর্তমানে এটি ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা। বর্তমানে পৌরসভার আয়তন ৬৬ দশমিক ৩১ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৩ জন। পৌরসভায় হোল্ডিংধারীর সংখ্যা ৩৬ হাজার ৫০০। প্রতিনিয়ত হোল্ডিংধারীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত হোল্ডিং করের ব্যাপারে আপত্তি দিয়েছেন ২২ হাজার ৪০০ হোল্ডিংধারী ব্যক্তি। আপত্তি দেওয়ার শেষ তারিখ ২০ জুন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১২ হাজার আপত্তির শুনানি হয়েছে।

শহরের গুহলক্ষ্মীপুর মহল্লার বাসিন্দা আয়শা বেগম বলেন, আগে তাঁর হোল্ডিং ট্যাক্স ছিল ২০০ টাকা। সেটি বাড়িয়ে ২ হাজার ৭০০ টাকা করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১৩ গুণ কর বেড়েছে।

আয়শা বেগম বলেন, গতকাল বুধবার তাঁর আপত্তির শুনানি অনুষ্ঠিত হয় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাজাহান মিয়ার কক্ষে। আপত্তির কথা বোর্ডের লোকজন শুনতেই চান না। গত পাঁচ বছরে তাঁর কোনো ঘর বাড়েনি। এরপরও তাঁর গৃহকর সাড়ে ১৩ গুণ বাড়ানো হয়েছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, সাত সদস্যের একটি কমিটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গ্রাহকদের আপত্তির শুনানি করছে। কমিটির আহ্বায়ক ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কুদ্দুসুর রহমান। মেয়র ও তিন কাউন্সিলর এ কমিটির সদস্য। এ ছাড়া সদস্য আছেন পৌরসভার দুই কর্মকর্তা—প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাজাহান মোল্লা ও সচিব তানজিলুর রহমান।

পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাজাহান মিয়া বলেন, হোল্ডিংগ্রহীতা যে বাড়িতে বসবাস করেন, সেই বাড়ি ভাড়া দিলে মাসে কত টাকা দিতে হবে, তার ১০ মাসের ভাড়ার ২৭ ভাগ পর্যন্ত কর হিসেবে ধার্য করা হয়। নিয়ম মেনেই কর আরোপ করা হয়। এ ক্ষেত্রে আইনের বরখেলাপ কিংবা গ্রাহকদের ওপর জুলুম করা হয়নি।

শাজাহান মিয়া আরও বলেন, পাঁচ বছর পরপর গৃহকর বাড়ানো হয়। আগে যেসব হোল্ডিংগ্রহীতার টিনের ঘর ছিল, বর্তমানে সেখানে পাকা ইমারত করেছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে কর বেশি বেড়েছে। যাঁদের অবকাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি, তাঁদের ক্ষেত্রে কর তেমন বাড়েনি।

এ বিষয়ে ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বলেন, পৌরসভা ২৭ ভাগ পর্যন্ত কর বাড়াতে পারে। এর মানে এই নয় যে ২৭ ভাগই কর বাড়াতে হবে। পৌরসভা হোল্ডিং গ্রাহকদের আয় এবং বর্তমানে গত দুই বছর ধরে চলমান করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ১০ ভাগের মধ্যে গৃহকর বাড়ানো যেতে পারে।