গোখাদ্যের চরম সংকট, কমছে দুধের উৎপাদন

বন্যার কারণে পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়ায় গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এতে গরু পালনকারীরা গোখাদ্যের বিকল্প হিসেবে কচুরিপানা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। বেড়া উপজেলার পেঁচাকোলা গ্রাম থেকে তোলা।প্রথম আলো

পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বেশি দামে গোখাদ্য কিনতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষকেরা। এ পরিস্থিতিতে কচুরিপানাসহ স্বল্প মূল্যের বা বিনা মূল্যের গোখাদ্যের দিকে ঝুঁকছেন খামারিরা। এতে গরুর স্বাস্থ্যহানি ও দুধের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।


খামারিরা জানান, বন্যার কারণে জুলাইয়ের শুরু থেকেই গোখাদ্যের দাম বাড়তে থাকে। তাঁরা মনে করেছিলেন, বন্যার প্রকোপ কমে গেলে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। কিন্তু পানি কমলেও গোখাদ্যের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। ৩০০ টাকা মণের খড় এখন ৫০০ টাকায়, ৮০০ টাকা দরের এক বস্তা (৩০ কেজি) খেসারির ভুসি ১ হাজার ২০০ টাকায়, ১ হাজার টাকা দরের এক বস্তা (৩৫ কেজি) গমের ভুসি ১ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বন্যার কারণে কাঁচা ঘাস একেবারেই মিলছে না।

এ পরিস্থিতিতে চড়া দামের গোখাদ্য কিনতে না পারায় অনেকে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার অনেকে গোখাদ্য কিনতে না পেরে খালবিল থেকে কচুরিপানা ও জঙ্গল থেকে লতাপাতা সংগ্রহ করছেন। বিকল্প হিসেবে এগুলোকেই তাঁরা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু এর ফলে গরুর দুধ উৎপাদন ব্যাপক কমে গেছে।
সম্প্রতি বেড়া বাসস্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী ইছামতী নদী থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করছিলেন বেড়ার পেঁচাকোলা গ্রামের শরীফুল ইসলাম ও রমজান আলী। তাঁরা জানান, বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় এমনিতেই গরুগুলো চরম কষ্টে ছিল। এর ওপর চড়া দামের কারণে গরুগুলোকে ঠিকমতো গোখাদ্য খাওয়াতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে তাঁরা প্রায় আট কিলোমিটার দূর থেকে কচুরিপানা সংগ্রহের জন্য ভ্যান নিয়ে এসেছেন। প্রতি ভ্যান কচুরিপানা নিয়ে যেতে ১৫০ টাকার মতো খরচ হচ্ছে।

পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়ায় গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এতে গরু পালনকারীরা গোখাদ্যের বিকল্প হিসেবে কচুরিপানা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। বেড়া বাসস্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী ইছামতী নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে তোলা।
প্রথম আলো

পেঁচাকোলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের ইউসুফ আলী নামের এক ব্যক্তি নৌকায় করে কচুরিপানা নিয়ে ঘাটে এসেছেন। ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমার সাতটা গরু। খ্যার (খড়) ভুসির যে দাম, তাতে গরু পালাই মুশকিল হয়া দাঁড়াইছে। তাই বাধ্য হয়া ৫০০ টাকা খরচ কইর‌্যা এক নৌকা কচুরিপানা নিয়্যা আসল্যাম। কচুরিপানা খাওয়ানোতে গরুর দুধ একেবারে কইম্যা গেছে, গরু এগুলো খাব্যারও চায় না।’

মিল্ক ভিটার আওতাভুক্ত সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারি প্রাথমিক দুগ্ধ সমবায় সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমাগরে সমিতিতে গরু পালনকারী সদস্যের সংখ্যা ১৩২। গোখাদ্যের চড়া দামের কারণে অনেকেই গরু বেইচ্যা দিতেছে। আমাগরে সমিতিতে দুধের উৎপাদন ৮৫০ লিটারের জায়গায় এখন ৫৫০ লিটারের মতো হতেছে।’
সাঁথিয়ার আমাইকোলা গ্রামে অবস্থিত দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সেফ মিল্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ শেখ জানান, বন্যার প্রভাবে গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক খামারিই ঠিকমতো গোখাদ্যের জোগান দিতে পারছেন না। খামারিদের কাছ থেকে আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দুধ পাওয়া যাচ্ছে।