গোখাদ্যের সংকটে খামারিরা

বন্যায় এখনো নিম্নাঞ্চল তলিয়ে থাকায় গোখাদ্য শিগগিরই সহজলভ্য হওয়ার সুযোগ তেমন নেই।

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তীব্র গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্ণি এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

সিলেটে বন্যায় বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার আগে যাঁরা ধান কেটে খড় সংগ্রহ করেছিলেন, সেসবও ভেসে গেছে। বিস্তীর্ণ গো-চারণ ভূমি আর গবাদিপশুর আবাসস্থল তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে ঘাসও। ফলে জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় এখন গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে কৃষক ও খামারিরা পড়েছেন বেকায়দায়।

একাধিক কৃষক ও খামারি জানিয়েছেন, ২০০৪ সালের পর সিলেটে বন্যার ব্যাপকতা এবারই বেশি ছিল। এ কার‌ণে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়েছে। এখনো নিম্নাঞ্চলে পানি রয়েছে। যে কারণে গোখাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকের কাছে খড় না থাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে গরুকে খাওয়াচ্ছেন। অনেকে উচ্চমূল্যে অন্য জায়গা থেকে খড়ও কিনছেন।

বিস্তীর্ণ গো-চারণ ভূমি আর গবাদিপশুর আবাসস্থল তলিয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় খড়ও বিনষ্ট হয়েছে
মো. রুস্তম আলী, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বন্যায় ২ হাজার ১২৮ দশমিক ১৫ একর চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে। এখনো এর বেশির ভাগ পানিতে তলিয়ে আছে। বন্যায় জেলায় ১ হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন খড় বিনষ্ট হয়েছে। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ ৮৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা। বন্যায় জেলায় ২৫৮ মেট্রিক টন ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ ১২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বন্যায় পানিতে ডুবে এবং রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে ১৮টি গরু, ১২টি মহিষ, ৪৯টি ছাগল ও ২৬টি ভেড়া।

একই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মোট গরু আছে প্রায় ১২ লাখ। এর বাইরে প্রায় ২ লাখ ছাগল, ৬০ থেকে ৭০ হাজার মহিষ এবং ৬০ থেকে ৬৫ হাজার ভেড়া আছে। এর মধ্যে বন্যাকবলিত হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৯৫টি গরু, ৮ হাজার ৪৫৬টি মহিষ, ৩৮ হাজার ৮৮৮টি ছাগল এবং ১৬ হাজার ৯৩৭টি ভেড়া। বন্যাকবলিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া ১২ হাজার ৯৮৬টি গবাদিপশুকে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ৫ হাজার ৩০৪টি গবাদিপশুকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর কৃষক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, পুরো উপজেলা জুড়ে গোখাদ্যের তীব্র সংকট চলছে। কৃষক ও খামারিরা গরুসহ গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বন্যায় এখনো নিম্নাঞ্চল তলিয়ে থাকায় গোখাদ্য শিগগিরই সহজলভ্য হওয়ার সুযোগ তেমন নেই। তাই গোখাদ্য সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের উচিত কৃষক ও খামারিদের সহায়তা করা।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, গ্রামে গ্রামে কৃষকেরা শুধু কচুরিপানা খাইয়ে গরু-ছাগল বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তাই বন্যার পানির সঙ্গে ভেসে আসা কচুরিপানা এখন সংগ্রহ করছেন কৃষকেরা। অনেক কৃষক নিজেদের গবাদিপশু বাঁচাতে ধারকর্জ করে টাকা এনে অন্য জায়গা থেকে খড় কিনে আনছেন। গোখাদ্যের সংকটে অনেকে গরু-ছাগল বিক্রিও করে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় গবাদিপশুর জন্য দানাদার খাবার ও খড় সরবরাহের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কৃষকেরা দাবি জানিয়েছেন।

কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন্ত ব্যানার্জি বলেন, গোখাদ্যের সংকটের বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ আসামাত্রই কৃষক ও খামারিদের গোখাদ্য দিয়ে সহায়তা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রুস্তম আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যাকবলিত এলাকায় বিস্তীর্ণ গো-চারণ ভূমি আর গবাদিপশুর আবাসস্থল তলিয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় খড়ও বিনষ্ট হয়েছে। তাই সংকট দেখা দিয়েছে। এর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে টিকাদান ও চিকিৎসার জন্য আমাদের পশু চিকিৎসক দল বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ করছে।’