গোদাগাড়ীতে খাদ্য অধিদপ্তরের সিলযুক্ত ৪০০ বস্তা গম জব্দ

রাজশাহী জেলার মানচিত্র

কালোবাজারির অভিযোগে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এক ব্যবসায়ীর ৪০০ বস্তা গম জব্দ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আজ রোববার বিকেলে ওই ব্যবসায়ীসহ আরও প্রায় ১৫ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে গোদাগাড়ী থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, খাদ্যগুদামে সরবরাহের জন্যই নিম্নমানের গম বাইরে থেকে কিনে আনা হয়েছে।

ওই ব্যবসায়ীর নাম আতাউর রহমান ওরফে আতা। তাঁর বাড়ি গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট পৌরসভার রসুলপুর দিঘিপাড়া মহল্লায়। খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল শনিবার রাত নয়টার দিকে ওই ব্যবসায়ীর বাড়ির সামনে থেকে চারটি ট্রলিভর্তি এসব গম জব্দ করে। এ সময় ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে তালা দেওয়া ছিল। ডেকে কাউকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে পুলিশ ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি একপর্যায়ে তিনি ফোন বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁর পক্ষ থেকে তাঁর আত্মীয়স্বজন এসে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, এই গম আতাউর রহমানের। কিন্তু কোত্থেকে গম কেনা হয়েছে, তাঁরা তার কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি। প্রতিটি বস্তার গায়ে খাদ্য অধিদপ্তরের সিল দেওয়া রয়েছে।

এ নিয়ে পুলিশ ধন্দে পড়ে, গমগুলো খাদ্য অধিদপ্তরের, নাকি বাইরে থেকে কেনা, এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পারেনি। পুলিশ ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে না পেরে একপর্যায়ে তাঁর খাদ্যগুদামের তালার ওপরে আরেকটি তালা লাগিয়ে দেয়। গমগুলো বর্তমানে কাঁকনহাট তদন্ত কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। প্রতিটি বস্তায় ৫০ কেজি গম রয়েছে। গমের মোট ওজন ২ হাজার কেজি বা ২০ মেট্রিক টন।

এখন প্রতি কেজি গম ২৮ টাকায় কৃষকের কাছ থেকে কিনছে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু বাজারেই এবার গমের দাম ২৬ টাকা কেজি। মণপ্রতি দুই টাকা বেশি পেতে কৃষকেরা খাদ্যগুদামে গম দেওয়ার ঝামেলা পোহাতে চাচ্ছেন না। এই সুযোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান পাটোয়ারি জানান, ব্যবসায়ী হিসেবে আতাউর রহমানের খাদ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স রয়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন। তাঁর বাড়ির পাশে খাদ্যগুদামও রয়েছে। সেটিতে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ীর পক্ষে যাঁরা সেখানে এসেছিলেন, তাঁদের বলা হয়েছিল যে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাঁকে কোনো প্রকার হয়রানি করা হবে না।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জানে আলমও ঘটনাস্থলে ছিলেন। তাঁর পক্ষ থেকেও এই ঘোষণা দেওয়া হয়। তারপরও আতাউর রহমান ঘটনাস্থলে আসেননি। ওসি বলেন, ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলতে পারলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যেত। এখন তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

এদিকে স্থানীয় সূত্র অভিযোগ করেছে, এখন প্রতি কেজি গম ২৮ টাকায় কৃষকের কাছ থেকে কিনছে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু বাজারেই এবার গমের দাম ২৬ টাকা কেজি। মণপ্রতি দুই টাকা বেশি পেতে কৃষকেরা খাদ্যগুদামে গম দেওয়ার ঝামেলা পোহাতে চাচ্ছেন না। এই সুযোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা কম দামে আমদানি করা নিম্নমানের গম গুদামে দিচ্ছেন। এতে তাঁদের লাভ হচ্ছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশেই ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ নিচ্ছেন। উদ্ধার করা গমগুলোও এ ধরনের হতে পারে। সরকারি খাদ্যগুদামে ঢোকানোর আগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এগুলো জব্দ করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জামাল উদ্দীন বলেন, ‘গম উদ্ধার করা হয়েছে বলে শুনেছি। আর বিস্তারিত জানি না। তবে এসব গম কাঁকনহাটের খাদ্যগুদাম থেকে বের হয়নি।’

ওসি খলিলুর রহমান বলেন, এই গম খাদ্যগুদাম থেকে বের করা হয়েছে, নাকি ঢোকানোর জন্য আনা হয়েছিল, তা বলা যাচ্ছে না। তাঁরা কালোবাজারির অভিযোগে একটা মামলা করেছেন। আসামি আতাউর পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বিষয়টি বোঝা যাবে।