গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতাল হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে বাদীপক্ষের নারাজি

গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ চিনিকলের এই জমিতে ঘর ছিল সাঁওতালদের। তাদের উচ্ছেদের পর সেই ঘরে আগুন লাগানো হয়। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর
ফাইল ছবি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বহুল আলোচিত তিন সাঁওতাল হত্যা মামলার অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করে নারাজি দাখিল করেছে বাদীপক্ষ। আজ সোমবার বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্রের আদালতে এ নারাজি দাখিল করা হয়।

নারাজি শুনানিতে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রফিক আহম্মেদ সিরাজী, গাইবান্ধা জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মুরাদ জামান রব্বানী এবং স্থানীয় আদালতের আইনজীবী ফয়জুল আলম। আইনজীবী রফিক আহম্মেদ সিরাজী বলেন, এ মামলার উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মূল আসামিদের অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে ১৬টি পয়েন্ট উল্লেখ করে আদালতে নারাজি দাখিল করা হয়েছে। আদালত বলেছেন, যেহেতু চার্জশিটটি অনেক বড়, তিনি চার্জশিটটি পড়ে দেখবেন। আইনজীবী আরও বলেন, ‘পুলিশ বা অন্য প্রশাসনের ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। আমরা সরাসরি জুডিশিয়াল তদন্ত চেয়েছি।’

পুলিশ বা অন্য প্রশাসনের ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। আমরা সরাসরি জুডিশিয়াল তদন্ত চেয়েছি।
রফিক আহম্মেদ সিরাজী, বাদীপক্ষের আইনজীবী

আইনজীবী রফিক আহম্মেদ সিরাজী আরও বলেন, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চিহ্নিত পুলিশ সদস্যদের (সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিল) গ্রেপ্তার বা রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। জনমতের চাপে বাধ্য হয়ে ঘটনার ১০ দিন পর মামলা রেকর্ড করলেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের ঘটনাটি ধামাচাপা ও প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় না আনার মতো উদাসীনতা প্রমাণ করে যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জড়িত ও দায়ী পুলিশ সদস্যদের পক্ষপাতমূলকভাবেই অভিযোগপত্রে আসামিভুক্ত করেননি।

এ সময় আদালত চত্বরে ভিড় করেন সাঁওতালরা। এরপর বিকেলে সাঁওতালরা আদালত চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ আদালতে নারাজি মামলা করার পর আদালত চত্বরে ভিড় করেন সাঁওতালরা। আজ সোমবার
প্রথম আলো

গত বছরের ২ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪৯৬ নম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। সেখানে মামলার মূল আসামিদের বাদ দিয়ে চার্জশিট দাখিল করলে বাদীপক্ষ অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করে এই নারাজি করে।

নারাজি দাখিলের পর আজ বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে আদালত চত্বর এলাকায় একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্ক এতে সভাপতিত্ব করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রফিক আহম্মেদ সিরাজী, সিপিবি গাইবান্ধা জেলা কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক মুরাদ জামান, সিপিবি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুফল হেমব্রম, কোষাধ্যক্ষ গণেশ মুরমু, প্রচার সম্পাদক রাফায়েল হাজদা, প্রিসিলা মুরমুসহ আরও অনেকে।

বক্তারা বলেন, সাঁওতালদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সঙ্গে সাঁওতাল হত্যা, বসতবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ ৭ দফা দাবি জানানো হয়।

গত বছরের ২ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪৯৬ নম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। সেখানে মামলার মূল আসামিদের বাদ দিয়ে চার্জশিট দাখিল করলে বাদীপক্ষ অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করে এই নারাজি করে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ আদালতে নারাজি মামলা করার পর আদালত চত্বরে সাঁওতালদের মানববন্ধন। আজ সোমবার
প্রথম আলো

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশ সঙ্গে নিয়ে রংপুর চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমিতে আখ কাটতে যান চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এ সময় নিজেদের বাপ-দাদার জমি দাবি করে বাধা দেন সাঁওতালরা। এতে পুলিশ, চিনিকলের শ্রমিক ও সাঁওতালদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে রমেশ টুডু, শ্যামল হেমব্রম ও মঙ্গল মার্ডি নামের তিন সাঁওতাল নিহত হন। আহত হন উভয় পক্ষের ২০ জন। ওই ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে থোমাস হেমব্রম বাদী হয়ে তৎকালীন গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সাংসদ আবুল কালাম আজাদ, চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আউয়াল, গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ এবং ৫০০-৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় এজাহার দাখিল করেন।

পুলিশ সেটিকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে গ্রহণ করে। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করলে থোমাস হেমব্রমের জিডি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পিবিআই ২০১৯ সালে ২৩ জুলাই মূল আসামিদের বাদ দিয়ে ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করে নারাজি দাখিল করা হয়। নারাজি আমলে নিয়ে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।