গোয়ালন্দে বন্যার পানি কমছে, চলছে ভাঙন
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পদ্মা-তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। দুই দিন ধরে পানি কমতে শুরু করায় ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে। উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এদিকে নিম্নাঞ্চল এখনো জলমগ্ন। ভাঙনের কবলে পড়ায় দৌলতদিয়া ইউনিয়নের যদু মাতুব্বরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে দ্রুত সরিয়ে নিতে সরকারিভাবে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৯ সেন্টিমিটার পানি কমে গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, নদী-তীরবর্তী এলাকার অধিকাংশ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। অনেকের বাড়িতে পানি উঠে গেছে।। নৌকা বা কলাগাছের ভেলায় করে চলাচল করতে হচ্ছে। কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে কেউ কেউ এলাকা ত্যাগ করছেন।
দৌলতদিয়ার ইদ্রিস মিয়ার গ্রামের একটি মুদি দোকানে এলাকার কয়েকজন বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। স্থানীয় আলামিন শেখ বলেন, ‘চারদিকে পানি। কাজকর্ম নেই। তাই গ্রামের এই দোকানের সামনে একটু শুকনো জায়গা পেয়ে বসে গল্পগুজব করে সময় কাটাচ্ছি।’
১ নম্বর বেপারীপাড়া মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তার মধ্যে স্থাপিত সেতুর দুই পাশের মাটি না থাকায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার আবদুল সরদার বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষায় সেতুর দুই পাশে মাটি থাকে না। রাস্তা ভেঙে যায়। আমাদের নৌকা ছাড়া কোনো গতি নেই। এখন একবার নৌকায় আসা-যাওয়া করতে হলে নৌকাওয়ালাকে ১০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়।’
দৌলতদিয়ার যদু মাতুব্বরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যালয়ের আশপাশের পরিবার ভাঙনের আতঙ্কে অন্যত্র চলে গেছে। সদ্যপ্রয়াত স্থানীয় ইউপি সদস্য পান্নু মোল্লার মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে তাঁর নিজের বসতবাড়ির ঘরের চালাসহ সব জিনিসপত্র ওই বিদ্যালয়ে জমা করে রাখেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যেভাবে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে যেকোনো মুহূর্তে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে যাবে। আমরা ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছি।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান মণ্ডল বলেন, পদ্মা-তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় কয়েক শ বিঘা ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ভাঙনের কারণে আতঙ্কগ্রস্ত অনেক পরিবার অন্যত্র চলে গেছে।
দেবগ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, নদী-তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের কারণে গত তিন সপ্তাহে প্রায় ২০০ পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় অনেক হতদরিদ্র পরিবার পানিবন্দী জীবনযাপন করছে। এখন পর্যন্ত এসব পরিবারকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, ‘আমরা দ্রুত যদু মাতুব্বরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরিয়ে নিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছি। অতি দ্রুত দরপত্র প্রদানের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি ভেঙে ফেলা হবে। এ ছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের বলেছি।’