গোয়ালন্দে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি একাংশের

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংগঠনটির একাংশের নেতা-কর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুরে গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুলতান নুর ইসলাম অভিযোগ করেন, গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা, কর্মিসভা বা বর্ধিত সভা না করে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে জেলা আহ্বায়ক কমিটি ১৮ অক্টোবর রাতের অন্ধকারে উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক দিয়েছে।

সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির ৭ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছেন। ৮ নম্বর সদস্য আ. খালেক ব্যাপারী আওয়ামী লীগে যোগদান করে শ্রমিক লীগের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন। ২৭ নম্বর সদস্য আওয়ামী লীগে যোগদান করে নৌকা প্রতীকের পক্ষে জাতীয় নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়েছেন। ঘোষিত কমিটি বাতিল করে গঠনতান্ত্রিকভাবে কর্মিসভা করে কমিটি ঘোষণার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পূর্বঘোষিত জেলা আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও অব্যাহতি পাওয়া সদস্যসচিব মনজুরুল আলম ওরফে দুলাল, গত ১ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত কমিটির উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সুলতান নুর ইসলাম, সদস্যসচিব নাজিরুল ইসলাম, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এ বি এম ছাত্তার, সদস্যসচিব গোলাম মোন্তাহারাতুলসহ উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। তাঁরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সাংসদ আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম গ্রুপের সমর্থিত হিসেবে পরিচিত।

এর আগে ১৮ অক্টোবর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্যাডে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী ও সদস্যসচিব কামরুল আলমের যৌথ স্বাক্ষরে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, পৌরসভার কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন শেখকে আহ্বায়ক এবং মোশারফ আহমেদকে সদস্যসচিব করে ৪১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাঁরা জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আসলাম মিয়া গ্রুপের হিসেবে পরিচিত। এই কমিটির ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আইয়ুব আলী খান বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিন দিন আগে পদত্যাগ করেন।

২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আইয়ুব আলী খান পদত্যাগের বিষয়ে বলেন, ‘আমাকে ব্ল্যাকমেল করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। আমি পরবর্তী সময়ে আবার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছি এবং এই আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গেই আছি।’

সদস্যসচিব মোশাররফ আহমেদ টাকা খেয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দেওয়ার অভিযোগ নাকচ করে বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় দল। এখানে হাজার হাজার নেতা-কর্মী। দলের সব সিদ্ধান্তে সবার মতানৈক্য না হওয়াটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। তবে আমাদের সবার আদর্শ ও লক্ষ্য এক এবং অভিন্ন। সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ থেকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই দল।’

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. নিজাম উদ্দিন শেখ বলেন, এই কমিটি গঠনতান্ত্রিকভাবে জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের স্বাক্ষরেই হয়েছে। ‘টাকার বিনিময়ে কমিটি হয়েছে’ এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা একান্তই তাদের মনগড়া কথা। তাঁরা কমিটিতে ভালো জায়গায় আসতে পারে নাই বিধায় এমন কথা বলে বেড়াচ্ছেন।’

এর আগে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব ও যুগ্ম আহ্বায়কের স্বাক্ষরিত একটি কমিটি অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সদস্যসচিবকে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে শোকজ করে তাঁকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন সদস্যসচিব নিয়োগ দেওয়া হয়।