গ্যাসলাইনের আগুনে দগ্ধ ব্যবসায়ীর মৃত্যু, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অবহেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে দায় নিতে রাজি নয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সওজ। জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, দোষী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

গ্যাসলাইনের আগুনে দগ্ধ ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর স্থানীয়রা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। মঙ্গলবার সক‌ালেপ্রথম আলো

সিলেট শহরতলির টুকেরগাঁও এলাকায় গ্যাসলাইনের ফাটল থেকে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ হয়ে সাইদ আহমদ (৪০) নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যার দিকে তিনি দগ্ধ হন। এরপর সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মঙ্গলবার সকাল সাতটায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত সাইদের পরিবার ও স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অবহেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় ব্যক্তিরা আজ সকাল সোয়া সাতটা থেকে সোয়া নয়টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।

নিহত সাইদ আহমদ (৪০) সদর উপজেলার টুকেরবাজার টুকেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সওজের অধীন টুকেরগাঁও এলাকায় একটি খালের ওপর সেতু নির্মাণের কাজ চলছিল। গত রোববার খননযন্ত্র দিয়ে সেতুর কাজ করার সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা ওই স্থানে গ্যাসের লাইন থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানান। এরপরও কাজ চলছিল। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে ব্রিজ–সংলগ্ন দোকানটিতে মালামাল রাখতে যান সাইদ আহমদ। এ সময় হঠাৎ আগুন লেগে তিনি দগ্ধ হন। পরে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় স্থানীয় ব্যক্তিরা প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আয় থেকেই পরিবারের পাঁচজন সদস্য চলতেন। এখন ভাইও নেই, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটিও নেই। সাইদের স্ত্রীসহ চার সন্তানকে অনাহারে থাকতে হবে।
মকবুল হোসেন, নিহত সাইদ আহমদের ভাই

নিহত সাইদ আমদের ভাই মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সওজ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও জালালাবাদ গ্যাসের অবহেলার কারণেই তাঁর ভাই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এর দায় তাদের নিতেই হবে। জালালাবদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েও বিলম্বে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। এতে তাঁর ভাইয়ের দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আয় থেকেই তাঁর পরিবারের পাঁচজন সদস্য চলতেন। এখন ভাইও নেই, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটিও নেই। সাইদের স্ত্রীসহ চার সন্তানকে অনাহারে থাকতে হবে।

তবে সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্প্রেক্টা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ করা হচ্ছিল সড়কের ডান পাশে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বাঁ পাশে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাঁদের প্রতিষ্ঠানের কোনো দায় নেই। গ্যাসের লাইনের বিষয়ে অবহিত ছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি সওজের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর দায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিতে হবে। আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর পরও কেউ পরিবারটির খোঁজ নেয়নি।
শহীদ আহমদ, চেয়ারম্যান, টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ

যোগাযোগ করা হলে সিলেট সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়াও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর কাজ চলছিল সড়কের ডান পাশে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বাঁ পাশে। এ ছাড়া ওই স্থানে সড়কে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকার কথা না। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলে সেটি অবৈধ।

জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (পাইপলাইন অপারেশন) মো. সারোয়ার জাহান মাহমুদ বলেন, তাঁরা সওজ কর্তৃপক্ষকে আগেই চিঠি দিয়ে অবহিত করে রেখেছিলেন গ্যাসলাইন স্থাপন করা এলাকায় কাজ থাকলে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য। তারপরও রোববার তারা কাজের বিষয়টি অবহিত করেনি। স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পেরেছেন, সেতুর কাজ করার সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা বাধা দিয়েছিলেন। এরপর তাঁরা এমনটি করেছে। এ থেকেই গ্যাসের লাইন ফেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে দোষী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

গ্যাসলাইনের আগুনে দগ্ধ ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর স্থানীয়রা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। মঙ্গলবার সক‌ালে
প্রথম আলো

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ বলেন, মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার সদস্যরা বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদ আহমদ বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে দায় স্বীকারও করেছে। এর দায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিতে হবে। আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর পরও কেউ পরিবারটির খোঁজ নেয়নি।