গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে মারা গেল নীলগাইটি
ফসলের খেতে ছোটাছুটি করছিল দেখতে গরুর মতো একটি অপরিচিত প্রাণী। গ্রামের কয়েকজনের নজরে এলে তাঁরা প্রাণীটিকে ধরতে পিছু নেন। ধাওয়া করার একপর্যায়ে জড়ো হন প্রায় ২৫–৩০ জন। দীর্ঘক্ষণ তাড়া করার পরও ধরতে না পেরে আটটি মোটরসাইকেল নিয়ে পিছু নেন স্থানীয় লোকজন। এরপর সেখান থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দৌড়ে প্রাণীটি এসে একটি খাল লাফ দিয়ে পার হতে গিয়ে পড়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পড়ে থাকা প্রাণীটির শ্বাসকষ্ট দেখে চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের খবর দিতে না দিতেই প্রাণীটি মারা যায়।
আজ বুধবার দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বারো আউলিয়া মাজার এলাকাসংলগ্ন খোঁজপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া প্রাণীটি নীলগাই বলে নিশ্চিত করেছেন আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। তাড়া খেয়ে অতিরিক্ত দৌড়ানোর কারণে প্রাণীটি ক্লান্ত হয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে বলে জানান তিনি। এর আগে সকালে একই উপজেলার তোড়িয়া ইউনিয়নের দারখোর সীমান্ত দিয়ে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে নীলগাইটি।
মারা যাওয়া প্রাণীটি নীলগাই বলে নিশ্চিত করেছেন আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। তাড়া খেয়ে অতিরিক্ত দৌড়ানোর কারণে প্রাণীটি ক্লান্ত হয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে বলে জানান তিনি।
তোড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসান হাবিব আল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দারখোর সীমান্ত দিয়ে নীলগাইটি ভারতের কাঁটাতারের বেড়া লাফ দিয়ে পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ফসলি জমিতে ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় ২৫–৩০ জন নীলগাইটির পিছু নেন। একপর্যায়ে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। এ সময় স্থানীয় লোকজন ধরতে না পেরে আটটি মোটরসাইকেল নিয়ে প্রাণীটিকে তাড়া করতে থাকেন। খবর পেয়ে তিনি আটোয়ারী থানা-পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি জানান। একপর্যায়ে প্রাণীটি প্রায় ১০ কিলোমিটার দৌড়ে পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর ইউনিয়নে চলে যায়। পরে লোকজন বেশি হওয়ায় প্রাণীটি একটি খাল লাফ দিয়ে পার হতে গিয়ে পড়ে যায়। এ সময় সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়।
আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইজার উদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন একটি প্রাণীকে তাড়া করছে শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। মির্জাপুর এলাকায় একটি খাল লাফ দিতে গিয়ে প্রাণীটি পড়ে যায়। আমরা যাওয়ার পর দেখি প্রাণীটির শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে খবর দিই। এর কিছুক্ষণের মাথায় প্রাণীটি মারা যায়। পরে পশুচিকিৎসকেরা এসে নিশ্চিত করেন যে প্রাণীটি মারা গেছে। পরে আমরা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেটি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের হস্তান্তর করি।’
মারা যাওয়া নীলগাইটি পুরুষ প্রজাতির। প্রাপ্তবয়স্ক নীলগাইটি আট ফুট লম্বা এবং চার ফুট উচ্চতার। ধূসর রঙের নীলগাইটি প্রায় আড়াই থেকে তিন মণ ওজনের হবে। বাংলাদেশে অনেক আগেই বিলুপ্ত হওয়া নীলগাইটি ভারত থেকেই প্রবেশ করেছে।
আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অতিরিক্ত দৌড়ানোর কারণে নীলগাইটির শ্বাসকষ্ট হয়। এ সময় হার্ট অ্যাটাকে প্রাণীটি মারা গেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নীলগাইটিকে কেউ মারধর করতে না পারলেও তাড়া করার কারণে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া ভারতের কাঁটাতারের বেড়া পার হতে গিয়ে নীলগাইটির পেছনের দুটি পা কিছুটা কেটে গিয়েছিল।’
পঞ্চগড় সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হৃষিকেশ চন্দ্র রায় বলেন, মারা যাওয়া নীলগাইটি পুরুষ প্রজাতির। প্রাপ্তবয়স্ক নীলগাইটি আট ফুট লম্বা এবং চার ফুট উচ্চতার। ধূসর রঙের নীলগাইটি প্রায় আড়াই থেকে তিন মণ ওজনের হবে। মৃত নীলগাইটিকে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর এলাকার বঙ্গবন্ধু সেতু আঞ্চলিক মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হবে। বাংলাদেশে অনেক আগেই বিলুপ্ত হওয়া নীলগাইটি ভারত থেকেই প্রবেশ করেছে বলে তিনি জানান।