গ্রামে আনন্দ ফেরাতে ছাগল দৌড়

প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ১৬টি ছাগল। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার রামদি ইউনিয়নের মোজরাই গ্রামে।
ছবি: সংগৃহীত

গ্রামীণ আনন্দ আয়োজনে ভাটা পড়েছে অনেক আগেই। মাঠে খেলাধুলাও নেই তেমন। পালাগান কিংবা যাত্রাপালা এখন অতীত। করোনা বাস্তবতা গ্রামীণ দলগত আনন্দকে যেন বিদায় জানিয়েছে। মানুষের মন এখন ভালো নেই। এ অবস্থায় গ্রামে আনন্দ ফেরানোর ভাবনা থেকে ছাগল দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে একটি সংগঠন।

ব্যতিক্রমী এই প্রতিযোগিতা হয় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার রামদি ইউনিয়নের মোজরাই গ্রামে। ‘পশ্চিম মোজরাই শান্তি সংগঠন’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার দর্শক ছিলেন হাজার দুয়েক মানুষ।

দর্শকদের একজন মোজরাই গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এই চাকুরে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন প্রতিযোগিতার দর্শক। সাদ্দাম বলেন, সাধারণ কিছু দিয়েও যে পূর্ণ আনন্দ লাভ করা যায়, তা ছাগল দৌড় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে।

আমরার ঘরে ঘোড়া নাই, হাতি নাই। ছাগল আছে। ছাগল নিয়া নাইমা গেলাম মাঠে। আনন্দ পাইছি, আনন্দ দিছি।
সাকিব মিয়া, প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া ছাগলের মালিক

আয়োজক সূত্র জানায়, এক বছর আগে মোজরাই গ্রামে ‘পশ্চিম মোজরাই শান্তি সংগঠন’ প্রতিষ্ঠা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে সংগঠনের তেমন কোনো দৃশ্যমান কাজ ছিল না। কিছু একটা করার তাগিদ ছিল অনেক সদস্যের। এ অবস্থায় এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় নতুন কিছু করে গ্রামে আনন্দ ফিরিয়ে আনার। তখন সিদ্ধান্ত হয় ছাগল দৌড় প্রতিযোগিতার। তারিখ নির্ধারণ হয় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে। এ জন্য গ্রামে কয়েক দিন মাইক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা চালানো হয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ১৬টি ছাগল।

প্রথমে ঘোড়া ও গরু দৌড় প্রতিযোগিতার কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু এই দুটি প্রতিযোগিতা ব্যয়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ। পরে ছাগল দৌড়ের প্রস্তাব আসে।

প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া ছাগলের মালিক আব্দুল্লাহপুর গ্রামের সাকিব মিয়া। দ্বিতীয় হয় মোজরাই গ্রামের শফিক মিয়ার ছাগল। তৃতীয় স্থানটি পায় আব্দুল্লাহপুর গ্রামের হিরা মিয়ার ছাগল। প্রথম পুরস্কার ছিল একটি মুঠোফোন, দ্বিতীয় একটি সাউন্ড বক্স ও তৃতীয় পুরস্কার ছিল ইলেকট্রিক কেতলি।

প্রতিযোগিতার কয়েক দিন আগে থেকে গ্রামে মাইকিং করে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা চালানো হয়। প্রতিযোগিতার দর্শক ছিলেন হাজার দুয়েক মানুষ।
ছবি: সংগৃহীত

বোরহান উদ্দিন আয়োজক সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। এই ব্যতিক্রমী আয়োজন সম্পর্কে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম কথা হলো গ্রামীণ বিনোদনগুলো এখন আর প্রায় নেই। করোনা যেন আরও দূরে ঠেলে দিয়েছে। গ্রামে আনন্দ ফিরিয়ে আনতে হবে, এমন চিন্তা মাথায় কাজ করছিল। ঘোড়া ও গরু দৌড় প্রতিযোগিতার কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু এই দুটি প্রতিযোগিতা ব্যয়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ। পরে ছাগল দৌড়ের প্রস্তাব আসে। আয়োজনটি নতুন এবং ব্যতিক্রম হবে, সেই ভাবনা থেকেই নেওয়া।

অনুভূতি জানাতে গিয়ে পুরস্কার বিজয়ী সাকিব মিয়া কিছুটা বিব্রত। পরে তিনি বললেন, ‘আমরার ঘরে ঘোড়া নাই, হাতি নাই। ছাগল আছে। ছাগল নিয়া নাইমা গেলাম মাঠে। আনন্দ পাইছি, আনন্দ দিছি। এ ধরনের আনন্দ পাওয়ার প্রয়োজন আছিল।’