গ্রেপ্তার চার শিশু বাড়ি ফিরল, স্বস্তিতে অভিভাবকেরা

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ছয় বছরের কন্যাশিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার চার শিশুকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে শিশুদের আজ শুক্রবার সকালে অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সকাল সাতটার দিকে  একটি মাইক্রোবাসে করে যশোর থেকে চার শিশুকে বাকেরগঞ্জ আনা হয়। এরপর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেই চার শিশুকে তাদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেন।

ওই চার শিশুকে স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাধবী রায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ, বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম প্রমুখ।

গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের বুকে টেনে নিয়ে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মামলার ১ নম্বর আসামির বড় ভাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইকে গ্রেপ্তারের পর আমাদের খাওয়া ও রাতের ঘুম সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওদের ফিরে পাওয়ায় আমাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।’

ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার চার শিশুর বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে উচ্চ আদালতের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি আদেশ দেন। ওই আদেশে বলা হয়েছে, যশোরের জেলা প্রশাসককে যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ওই চার শিশুকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে করে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সেই সঙ্গে বরিশালের সংশ্লিষ্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ১১ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টায় সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালতে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। একই সঙ্গে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ওই চার শিশুকে তাদের অভিভাবকসহ একই তারিখে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে আজ সকালে ওই চার শিশুকে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা মা-বাবার কাছেই থাকবে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন হবে।

বাকেরগঞ্জে গত ৪ অক্টোবর ছয় বছরের এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় শিশুটির খেলার সঙ্গী চার শিশুকে আসামি করা হয়। মামলার পর ওই চার শিশুকে বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তার করে বাকেরগঞ্জ থানার পুলিশ। পরে বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করা হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েতউল্লাহ ওই চার শিশুকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় ওই শিশুদের পুলিশ প্রিজনভ্যানে সেখানে পাঠানো হয়।

ওই চার শিশুর স্বজনদের দাবি, মামলায় এসব শিশুর বয়স ১০ থেকে ১১ বছর উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের বয়স ৮ থেকে ৯ বছরের মধ্যে। ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মূলত জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।