গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সভা

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বগুড়া সার্কিট হাউসে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। সভায় মেয়র প্রার্থী এবং স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে সেই সভায় অংশ নেন মেয়র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ (ডান দিক থেকে তৃতীয়)।
ছবি: সংগৃহীত ।

অর্থ আত্মসাতের মামলায় বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ‘আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী’ আবদুল মান্নান আকন্দের বিরুদ্ধে বুধবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বগুড়ার একটি আদালত। সেই পরোয়ানা নিয়েই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়েছেন তিনি। প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন পুরোদমে।

আবদুল মান্নান বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাঁকে। জেলার পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক আবদুল মান্নান বর্তমানে জেলা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতির সভাপতির পদে রয়েছেন।

সূত্রগুলো জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বগুড়া সার্কিট হাউস মিলনায়তনে পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক। উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞাসহ জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। চার মেয়র প্রার্থীই ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু ওবায়দুল হাসান, বিএনপির রেজাউল করিম, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আবদুল মতিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ।

জানতে চাইলে আবদুল মান্নান আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে তাঁর পক্ষে যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে, তাতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দুই দলের প্রার্থী এবং একটি  প্রভাবশালী মহল এক জোট হয়ে তাঁর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে নির্বাচনই শেষ হবে। তা ছাড়া আমি নিজেও চাই, পুলিশ গ্রেপ্তার করুক। যত বেশি ষড়যন্ত্র হবে, তত বেশি ভোটের ব্যবধান বাড়বে।’

আবদুল মান্নান জানান, নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি পার বগুড়া, ধাওয়াপাড়া মহল্লায় গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন। পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

বগুড়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে পরবর্তী তিন বছরে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) বগুড়া শাখা থেকে তৎকালীন ব্যবস্থাপক, ২ কর্মকর্তা, ৬ ব্যবসায়ীসহ ৯ জন পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন গ্রাহকের নামে ভুয়া ঋণহিসাব খুলে ৩১ কোটি ১৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় এসআইবিএলের বগুড়া শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলাটি তদন্ত করে এবং ২০১৭ সালে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

আবদুল মান্নান আকন্দ
ফাইল ছবি

২০১৬ সালের ৪ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে এসআইবিএলের সাবেক ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান আকন্দকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। কিছুদিন কারাগারে থাকার পর জামিন পান তাঁরা।

বুধবার বগুড়ার সিনিয়র স্পেশাল জজ এমরান হোসেন চৌধুরীর আদালতে দুদকের করা ওই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। মামলার অন্য আট আসামি আদালতে হাজির হলেও আবদুল মান্নান আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে আদালত ৯ আসামির বিষয়ে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল মান্নান আকন্দের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তিনি হাতে পাননি।