মধ্যরাত থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি বন্ধ, দুর্ভোগ

ঘন কুয়াশায় মাঝনদীতে আটকা পড়ে ফেরি
ছবি: প্রথম আলো

ঘন কুয়াশার কারণে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে মাঝনদীতে আটকা পড়ে ছয়টি ফেরি। এ ছাড়া পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে শতাধিক যাত্রীবাহী বাস। কনকনে শীতে চরম দুর্ভোগ পোহান আটকে পড়া যাত্রীরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথের অববাহিকায় পদ্মা নদী কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গেলে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পথ হারিয়ে উভয় ঘাট থেকে ছেড়ে আসা ছয়টি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে মাঝপদ্মায় নোঙর করতে বাধ্য হয়। এদিকে পাটুরিয়া প্রান্তে পাঁচটি ও দৌলতদিয়া প্রান্তে পাঁচটি ফেরি অবস্থান করছে।

পারাপার বন্ধ থাকায় ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়ি পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে। এসব যাত্রীবাহী বাস পাটুরিয়া-উথলী সংযোগ সড়কে দীর্ঘ সারিতে নদী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে পাটুরিয়ায় টার্মিনালে রাখা হয়েছে।

পারাপার বন্ধ থাকায় শীতের মধ্যে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা
ছবি: প্রথম আলো

অন্যদিনের চেয়ে আজ শুক্রবার পাটুরিয়ায় যাত্রী ও যাত্রীবাহী বাসের চাপ বেশি। কারণ, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেকে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। কিন্তু পারাপার বন্ধ থাকায় শীতের মধ্যে তাঁরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ বেশি।

যশোর সদরের আগরাইল গ্রামের বিপ্লব হোসেন ঢাকার মতিঝিলে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি গতকাল রাতে এ কে ট্রাভেলস পরিবহনের একটি বাসে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে রওনা দেন। মধ্যরাত থেকে তিনি পরিবার নিয়ে ঘাটে নদী পারাপারের অপেক্ষায় আছেন।

বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘রাত দেড়টার দিকে ঘাটে এসেছি। তীব্র শীত, কনকনে বাতাস। ঘাটে বাসের মধ্যে জবুথবু হয়ে রাত কাটিয়েছি। রুটি-কলা খেয়ে রাত কাটাতে হয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, পাটুরিয়া প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। সকালে অনেকে যানবাহন থেকে নেমে চা ও খাবার খাচ্ছেন।

ঘাট এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মধ্যরাত থেকে ফেরি বন্ধ থাকায় যানবাহনের চাপ বাড়ছে। আজ শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত যাত্রীবাহী শতাধিক বাস, শতাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি ও দুই শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি পাটুরিয়া প্রান্তে আটকা পড়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. জিল্লুর রহমান আজ সকালে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছুটির দিন হওয়ায় ঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের চাপ কিছুটা বেশি। ফেরি চলাচল শুরু হলে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়িগুলো আগে পারাপার হওয়ার সুযোগ পাবে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমে আসবে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে জানান, পঞ্চম দিনের মতো কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে দিন শেষে গভীর রাত থেকে এ সমস্যা তীব্র হচ্ছে। গভীর রাত থেকে পরদিন অনেক বেলা পর্যন্ত ফেরি বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়ছে শত শত যানবাহন। এর মধ্যে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী গাড়ির সঙ্গে অনেক ছোট গাড়িও রয়েছে।

আবু আবদুল্লাহ আরও বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কুয়াশার কারণে নৌযান চলাচল ব্যাহত হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে কুয়াশার ঘনত্ব আরও বাড়তে থাকলে একপর্যায়ে সামান্য দূরের কিছুই দেখতে না পেয়ে ফেরিচালকেরা বিষয়টি উভয় ঘাট কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন। পরবর্তী সময়ে কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রাত দুইটা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়। এর আগে উভয় ঘাট থেকে ছেড়ে কয়েকটি ফেরি কুয়াশা পরিস্থিতি খারাপ দেখে পুনরায় নির্দিষ্ট ঘাটে ফিরে আসে। বর্তমানে দৌলতদিয়া প্রান্তে ছয়টি ফেরি এবং বাকি সব ফেরি পাটুরিয়া প্রান্তে নোঙর করা রয়েছে। কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর ফেরিগুলো ঘাট ছাড়তে শুরু করবে। ফেরি বন্ধ থাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া প্রান্তে কয়েক শ গাড়ি নদী পাড়ের অপেক্ষায় রয়েছে। বিপরীত দিকে পাটুরিয়া প্রান্তেও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে কয়েক শ গাড়ি অপেক্ষায় রয়েছে। শীত ও কুয়াশার কারণে আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রী ও চালকেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।