ঘন কুয়াশায় ১০ ফেরি বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

ঘন কুয়াশায় মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথের উভয় প্রান্তে আটকা পড়া যানবাহন। পাটুরিয়া প্রান্তে, ১৮ ডিসেম্বর সকাল নয়টায়
ছবি: আব্দুল মোমিন

ঘন কুয়াশায় রোববার রাত থেকে আজ সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি বন্ধ ছিল। এ সময় মাঝনদীতে চারটি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে আটকা পড়ে। নদী পারাপার বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে আটকা পড়েছে ছয় শতাধিক বিভিন্ন যানবাহন। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও যানবাহনের শ্রমিকেরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৬টি ফেরি যানবাহন পারাপারে নিয়োজিত। তবে কুয়াশায় নৌপথ দেখতে না পাওয়ায় রোববার রাত থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, রোববার রাত ১০টার পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে অববাহিকায় পদ্মা নদী কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রাত পৌনে ১২টার দিকে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গেলে দিক হারিয়ে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে ছেড়ে যাওয়া চারটি ফেরি মাঝনদীতে এদিক–সেদিক যেতে থাকে। একপর্যায়ে ফেরিগুলো বাধ্য হয়ে মাঝনদীতে নোঙর করে। এ সময় যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া প্রান্তে পন্টুনে ১২টি ফেরি অবস্থান করছে।

এদিকে পারাপার বন্ধ থাকায় ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়ি পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে। এসব যাত্রীবাহী বাস পাটুরিয়া-উথলী সংযোগ সড়কে দীর্ঘ সারিতে নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে পাটুরিয়ায় টার্মিনাল ও উথলী মোড় এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে কুয়াশার তীব্রতা কমে গেলে ফেরি চলাচল পুনরায় শুরু হয়। এ সময় মাঝনদীতে আটকে থাকা ফেরিগুলো যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে গন্তব্যের দিকে যাত্রা করে।

ফরিদপুরগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের যাত্রী আনসার আলী (৫০) বলেন, জেলা–উপজেলা সদরেই তাঁর গ্রামের বাড়ি, থাকেন ঢাকার মিরপুরে। গ্রামের বাড়িতে যেতে রাত আটটার দিকে ঢাকার গাবতলী থেকে বাসে ওঠেন। সাভারে সালেপুর সেতুতে যানজটে আটকা পড়েন। রাত ১২টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটের কাছাকাছি এসে বাসটি আটকা পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ঘন কুয়াশায় ইতিমধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে বাসের মধ্যেই সারা রাত কাটিয়েছেন।

এ কে ট্রাভেলস পরিবহনের একটি বাসে করে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা থেকে ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় যাচ্ছিলেন শামসুল হক (৪০)। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দৌলতদিয়া প্রান্তে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর ফেরিতে করে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে কুয়শার মধ্যে পথ ভুল করে ফেরিটি এদিক–সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। একপর্যায়ে ফেরিটি মাঝনদীতে নোঙর করে। এরপর থেকে মাঝনদীতেই আছে।

ভুক্তভোগী কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, ঘাট এলাকায় রাতের বেলা খাবার হোটেল খোলা থাকে না। সারা রাত তাঁদের অনেককে বিস্কুট-কলা খেয়ে থাকতে হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবহারের উপযোগী কোনো শৌচাগারও নেই। প্রকৃতির কাজ সারতে নারী যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

ট্রাফিক পুলিশ ও ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল ও পারাপার বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় যানবাহনের তীব্র চাপ পড়েছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত পাটুরিয়া প্রান্তে দেড় শতাধিক যাত্রীবাহী বাস, দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাকসহ অর্ধশত ছোট গাড়ি আটকা পড়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জিল্লুর রহমান বলেন, ঘন কুয়াশায় ১০ ঘণ্টা ফেরি ফেরি বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া প্রান্তে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ পড়েছে। সকাল ১০টার দিকে ফেরি চলাচল শুরু হলে যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে যাত্রীবাহী বাসগুলোকে আগে পারাপার করা হচ্ছে।