ঘর না পেয়ে কষ্টে ২৫ পরিবার

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সরকারের এই উদ্যোগ। ঘর না পেয়ে ঝড়বৃষ্টির এই সময়ে ভোগান্তি বাড়ছে

শেরপুর জেলার মানচিত্র

শেরপুর সদর উপজেলার ডাকপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন সৈকত গুচ্ছগ্রামের ২৫টি পরিবার মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সরকারের দেওয়া পাকা ঘর এখনো পায়নি। ঝড়বৃষ্টির এই সময় পরিবারগুলোর ভোগান্তি বাড়ছে।

এদিকে কয়েকটি গৃহহীন পরিবারের অভিযোগ, ঘর দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তালিকায় তাঁদের নাম থাকলেও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ পড়েছে। এতে গৃহহীন পরিবারগুলো অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ‘মুজিব বর্ষ উপলক্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’, প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রতিশ্রুতির আলোকে সদর উপজেলার ৮৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমিতে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি আধপাকা বাড়ির নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রথম পর্যায়ে গত ২০ জানুয়ারি সদর উপজেলার ৩০টি পরিবারের কাছে বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন সৈকত গুচ্ছগ্রামের পাঁচটি পরিবারও রয়েছে। কিন্তু গুচ্ছগ্রামের অবশিষ্ট ২৫টি পরিবার এখনো বাড়ি পায়নি। এতে চলতি ঝড়বৃষ্টির মৌসুমে গৃহহীন পরিবারগুলো ভোগান্তিতে পড়েছে। উপায়ান্তর না পেয়ে অনেকেই অসমাপ্ত বাড়িতেই উঠে পড়েছেন।

গত বুধবার সরেজমিনে সৈকত গুচ্ছগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুই কক্ষবিশিষ্ট আধপাকা বাড়িগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনো দেয়ালে রং করাসহ কিছু কাজ বাকি। পানীয় জলের জন্য নলকূপ স্থাপন ও বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়নি। তবে বেশ কয়েকটি পরিবার অসমাপ্ত বাড়িতেই অবস্থান করছেন।

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা রাজু মিয়া বলেন, তাঁর আদি বাড়ি ছিল সদর উপজেলার জঙ্গলদী গ্রামে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের ফলে তাঁদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে সৈকত গুচ্ছগ্রামে বসবাস করছেন তাঁরা। সম্প্রতি সরকার থেকে একটি আধপাকা বাড়ির বরাদ্দ পেয়েছেন। ওই বাড়ি তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু দেয়ালে রং করাসহ কিছু কাজ বাকি। এখন ঝড়বৃষ্টির দিন। তাই বাধ্য হয়ে ওই ঘরেই পরিবার নিয়ে থাকছেন। বৃষ্টি হলে খুব অসুবিধায় পড়তে হয় তাঁদের।

সৈকত গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মৃত কিতাব আলীর স্ত্রী হনুফা বেগম বলেন, ‘আমরা নদীভাঙ্গা মানুষ। আমগরে জমি ও ঘর দেওয়া হইবো, এই কথা বইলা ইউএনও স্যার ও নায়েব সাহেব আইসা ওই ঘর ভাইঙ্গা দিছেন। চার মাস ধইরা বালুর ভিটার মধ্যে কষ্ট কইরা থাকছি। অহন শুনতাছি, আমগরে ঘর দিব না।’

সৈকত গুচ্ছগ্রামের আরেক বাসিন্দা ফরিদ আলী বলেন, নতুন ঘরের প্রাথমিক তালিকায় তাঁর ভাই রেজ্জাকের নাম ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়। এতে তাঁর ভাই পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

সৈকত গুচ্ছগ্রামের সভাপতি মো. নওশের আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নতুন ঘরের জন্য গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের তালিকা করে দিয়েছিলাম। পরবর্তীকালে এসি-ল্যান্ড (উপজেলা সহকারী কমিশনার-ভূমি) সাহেব সরেজমিনে তদন্তপূর্বক কিছু লোকের নাম বাদ দিয়েছেন। আবার সাতপাকিয়া ও কুলুরচর গ্রামের কিছু লোকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে গুচ্ছগ্রামের বাস্তুহারা কিছু লোক নতুন ঘরের সুবিধা থেকে বাদ পড়েছেন।’

শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ঘরগুলোর অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করা যায়, দ্রুতই তা সম্ভব হবে। এ ছাড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিদের সৈকত গুচ্ছগ্রামে অথবা অন্য কোনো স্থানে নতুন ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।