ঘরজুড়ে আলো, তবু মনে দুশ্চিন্তা

কিরণ ও ববিতা তাঁদের তিন জমজ ছেলের খরচ জোগাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের শাহাদৎ মেম্বার পাড়ায়
প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ববিতা বেগম ও কিরণ মুন্সির ঘর আলো করে এসেছে ফুটফুটে সন্তান। একজন-দুজন নয়, একসঙ্গে তিনজন। কিন্তু এই খুশির সময়েও তাঁদের মনে নেই শান্তি। দিনমজুর কিরণ তিন ছেলের খরচ জোগাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের শাহাদৎ মেম্বার পাড়ার কিরণ মুন্সির স্ত্রী ববিতা বেগম (২৮) গত ৪ নভেম্বর ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিকভাবে একে একে তিনটি ছেলের জন্ম দেন। তিনটি সন্তান সুস্থ আছে। কিরণ তাদের নাম রেখেছেন তামিম, তাসিন ও তানজিল। তাঁদের ঘরে ৭ বছর বয়সী আরেকটি ছেলে রয়েছে। নবজাতক তিনজনকে লালন-পালন করতে যে খরচ, তা রোজগার করতে পারেন না কিরণ। এ অবস্থায় তাদের লালন-পালন ও চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কিরণ ও ববিতা। নবজাতকদের আহারের জোগান দিতে গিয়ে রীতিমতো তাঁরা ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন।

কিরণ ও ববিতা বলেন, নদীভাঙনে সহায়-সম্বল হারিয়ে তাঁরা দৌলতদিয়া ইউনিয়নের শাহাদাৎ মেম্বার পাড়ায় আশ্রয় নেন। সেখানে স্থানীয়ভাবে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ শতাংশ জমি বাৎসরিক ভাড়া নিয়ে কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই গড়ে তোলেন। কিরণ কখনো হকারি, কখনো দিনমজুরের কাজ করে কোনোমতে ভরণপোষণ করেন পরিবারের।

ববিতা বলেন, সন্তানদের খাবারের জন্য কষ্ট দিতে পারেন না। কিন্তু তাঁদের কতটুকুই বা সামর্থ্য আছে। কী করবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না।

কিরণ বলেন, তিনটি সন্তানের জন্য প্রতিদিন দুধের প্যাকেট লাগে একটি। যার দাম প্রায় ৫০০ টাকা। এর ওপর পরিবারের বাকি সদস্যরাও তো আছে। তিনি দিনমজুরের কাজ করে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন। যার কারণে প্রতিদিনই কারও না কারও কাছ থেকে ধারদেনা করতে হয়। এভাবে আর কত দিন চলবে?

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক খান বলেন, দরিদ্র পরিবারটিতে একসঙ্গে জন্ম নেওয়া তিন শিশু যাতে অন্য শিশুদের মতো বেড়ে উঠতে পারে, এ জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শনিবার দুপুরে তিন মাসের শিশুখাদ্য ও পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি ঘর দেওয়ার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবানদের পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।