‘ঘরে চাউল নাই, বাইরে নামলেই পুলিশ লড়ায়’

লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া মোটরসাইকেলের চালকেরা পেটের দায়ে রাস্তায় বের হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী ইয়ারউদ্দিন খলিফা (র.) সেতু এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

‘ঘরে চাউল নাই। পোলা-মাইয়া লইয়া না খাইয়া আছি। কিস্তির লইগ্যা এনজিওর লোক দুয়ারে খাড়াইয়া থাহে, কিস্তির টাহা না দেতে পারলে খারাপ কথা কয়। বাইরে নামলেই পুলিশ লড়ায়।’

লকডাউন শুরুর পর এমন দুর্দিনে পড়েছেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার কপালভেড়া গ্রামের বাসিন্দা মনির মৃধা। তিনি উপজেলার পায়রাকুঞ্জ-সুবিদখালী রুটে রিকশাভ্যানের মতো ভাড়ায় মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মা–বাবাসহ সাত সদস্যের পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার সুবিদখালী ইয়ারউদ্দিন খলিফা (রা.) সেতুর ঢালে কথা হয় মনির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, লকডাউনে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করতে পারছেন না। আয়-রোজগার সম্পূর্ণ বন্ধ। লকডাউনের বিধিনিষেধ এবং পুলিশের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেও সড়কে নেমে এসেছেন পেটের দায়ে। তিনি বলেন, ‘সরকার লকডাউন দিছে আমরা মানি কিন্তু ঘরে বাবা-মা পোলা-মাইয়া লইয়া না খাইয়া আছি। একমুঠো চালও নাই। ধারদেনা কইরা কয়দিন চলছি।’

একটু সামনে গিয়ে বন্ধ একটি চায়ের দোকানের সামনে নিজেদের আড়াল করে বসে থাকতে দেখা যায় ভাড়ায় মোটরসাইকেলের চালক মিলন, আবদুল হক, স্বপন, জুয়েল, রিপন মল্লিক, কবির মৃধাকে। তাঁদের অবস্থাটাও একই রকম। লকডাউনে কারও ঘরেই খাবার নেই। দোকানদার বাকিতে পণ্য দিতে চান না। পেটের দায়ে পুলিশের ভয় উপেক্ষা করে লুকিয়ে লুকিয়ে মোটরসাইকেলে করে যাত্রী পরিবহনের চেষ্টা করছেন তাঁরা।

মো. মিলন বলেন, ঘরে বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ, ওষুধ কিনতে পারেন না। পরিবারের সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। তাই মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছেন। কিন্তু এক দারোগা মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে গেছেন। অনেক অনুরোধ করেও চাবি পাননি।

মোটরসাইকেলের চালক আবদুল হক বলেন, ‘খুব কম লেখাপড়া শিখেছি। তাই চাকরি খোঁজার সাহস পাইনি। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি মোটরসাইকেল কিনে ভাড়ায় চালিয়ে ঋণ পরিশোধ করি। সংসারের হাল ধরেছিলাম। প্রতিদিন ৫০০ থেকে হাজার টাকা আয় হতো, তা দিয়ে ভালোই চলত। এখন বেকার হয়ে গেছি।’

পায়রাকুঞ্জ মোটরসাইকেল চালক সমিতির সভাপতি মো. রিপন হোসেন বলেন, মির্জাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন কমপক্ষে ৫০০ যুবক। শুধু পায়রাকুঞ্জ থেকে সুবিদখালী সড়কে শতাধিক মোটরসাইকেলের চালক রয়েছেন। বর্ষাকাল এবং চলমান লকডাউনে এঁরা সবাই বেকার হয়ে পড়েছেন। আয়ের অন্য কোনো উপায় না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন এঁরা। তিনি সরকারের কাছে সাহায্যের দাবি জানান। লকডাউনে কোনো চালককে যেন না খেয়ে মরতে না হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. তানিয়া ফেরদৌস বলেন, কেউ যাতে না খেয়ে থাকেন, তার জন্য সরকারিভাবে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে শুকনো খাবার এবং আর্থিক সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে।