ঘরে ঢুকে যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা, আটক ১

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলায় মো. নাদিম মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে ঘরে ঢুকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় নাদিমের মা, স্ত্রী ও ভাইকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। মাদক ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আজ শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে উপজেলার পশ্চিম জোড়কানন ইউনিয়নের ভাটপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির মাথা, ঘাড়, বুক, পিঠ ও পায়ে কোপের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় ভাটপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নান (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ আটক করেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
নিহত নাদিম ভাটপাড়া গ্রামের ইদু মিয়ার ছেলে। তিনি যুবলীগের কর্মী ও পশ্চিম জোড়কানন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগদলীয় চেয়ারম্যান হাসমত উল্লাহ হাসুর অনুসারী ছিলেন। নিহত নাদিমের তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্র, মারামারিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২৪টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম জোড়কানন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ রয়েছে। এক পক্ষে রয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ইলিয়াছ ও অপর পক্ষে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান হাসমত উল্লাহ। নাদিম চেয়ারম্যান হাসমত উল্লাহর অনুসারী। সম্প্রতি মো. ইলিয়াছের অনুসারী ভাটপাড়া গ্রামের ফারুক হোসেন ও তাঁর স্ত্রী সাজনী বেগম মাদক কেনাবেচা করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। এরপর তাঁরা কিছুদিন জেল খেটে বের হন। ২৪ মার্চ ভোরে আবার ফারুকের বাড়িতে মাদকবিরোধী অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফারুকের ধারণা, নাদিম তাঁদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এ কাজ করেছেন। ওই দিন দুপুরে নাদিমের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালান ফারুক ও তাঁর অনুসারীরা। এ সময় নাদিমকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, চিকিত্সা শেষে শুক্রবার সকাল নয়টায় নাদিম বাড়ি ফিরে নিজ ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় ফারুক দলবল নিয়ে নাদিমের ঘরে ঢুকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি তাঁর মুখ, বুক, পিঠ ও পায়ে কুপিয়ে জখম করেন। তাঁর চিত্কারে মা রহিমা বেগম, স্ত্রী আমেনা বেগম ও ভাই মো. মহসিন এগিয়ে এলে তাঁদেরও কুপিয়ে জখম করা হয়। এ সময় বাড়িঘরও ভাঙচুর করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। নেওয়ার পরপরই চিকিত্সক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

জানতে চাইলে চেয়ারম্যান হাসমত উল্লাহ বলেন, ‘নাদিম আমাদের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যুবলীগের কর্মী, তবে পদে নেই। ইলিয়াছ মিয়ার লোকজন তাঁকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন।’

অভিযোগ অস্বীকার করে মো. ইলিয়াছ বলেন, ‘নাদিম দুষ্টু প্রকৃতির লোক। তাঁর বিরুদ্ধে বহু মামলা আছে। ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব রয়েছে। নাদিম চেয়ারম্যানের লোক। আমার কোনো লোক তাঁকে হত্যা করেনি। মাদক ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে এলাকায়। ওই কারণে খুনোখুনি।’

সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, নাদিমকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। নাদিম সাংগঠনিকভাবে কোনো পদে নেই। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও মাদকের অন্তত ২৪টি মামলা রয়েছে। রাতে মামলা হবে। শনিবার ময়নাতদন্ত হবে লাশের। পুরো বিষয় তদন্ত করা হচ্ছে।