ঘাটে মেয়েকে হারিয়ে ছোটাছুটি মায়ের, পেয়ে আনন্দের কান্না

প্রায় দেড় ঘন্টা খোঁজাখুঁজির পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় মেয়ে সাথীকে পান মা রেখা বেগম। ছবিটি মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরি ঘাট থেকে তোলাএম রাশেদুল হক

মেয়েকে নিয়ে বরিশাল থেকে বাসে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন এক মা। সারা রাত বাসে বসে থাকার পর আজ মঙ্গলবার ভোরের দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে শৌচাগারে যান। ফিরে এসে বাসটি আর আগের জায়গায় না পেয়ে মেয়ের খোঁজে ছোটাছুটি করতে থাকেন মা। দেড় ঘণ্টা পর মেয়েকে পেয়ে আনন্দে মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।

ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এতে আটকা পড়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। আজ মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়ার ঘাট পুলিশ বক্সের সামনে
প্রথম আলো

এই দুজন হলেন মা রেখা বেগম আর মেয়ে সাথী। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মধ্যবয়সী রেখা বেগম মেয়ে সাথীকে সঙ্গে নিয়ে জরুরি কাজে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে তাঁরা রওনা হন। রাত পৌনে তিনটার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছে জানতে পারেন, ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি বন্ধ। বাধ্য হয়ে সারা রাত হানিফ পরিবহনের বাসে বসে ছিলেন মা-মেয়ে। ভোরে বাস থেকে নেমে শৌচাগার খুঁজতে থাকেন মা রেখা বেগম। কোথাও না পেয়ে চলে যান ফেরিতে। সেখান থেকে বের হয়ে তিনি বাসটি হারিয়ে ফেলেন। এরপর হন্যে হয়ে ঘাটের এখানে-সেখানে বাস আর বাসে থাকা মেয়েকে খুঁজতে থাকেন তিনি। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বাসটি খুঁজে পান তিনি। বাসের মধ্যে থাকা মেয়েকে দেখতে পেয়ে আনন্দে কাঁদতে থাকেন তিনি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয় জানায়, তিন দিন ধরে কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিসহ নৌযান চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে নদী অববাহিকায় ঘন কুয়াশা পড়তে থাকে। কুয়াশার মাত্রা বাড়তে থাকলে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আজ বেলা ১১টার পর কুয়াশা কমতে থাকলে সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধের কারণে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে তিন কিলোমিটারের বেশি লম্বা লাইনে কয়েক শ গাড়ি আটকে থাকতে দেখা যায়।

ঘাটের জটে দীর্ঘসময় আটকে থেকে অনেকে চা পান করতে নামেন
প্রথম আলো

আজ ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে অবস্থান করে দেখা যায়, কুয়াশার মধ্যে যানবাহনগুলো সড়কে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যানবাহনের যাত্রীদের কেউ গাড়িতেই ঘুমিয়ে আছেন, আবার কেউ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চা পান করছেন। আবার কেউবা হোটেল থেকে নাশতার কাজ সেরে নিচ্ছেন।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ বলেন, তিন দিন ধরে কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল মধ্যরাত থেকে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত ফেরি বন্ধ থাকায় অসংখ্য মানুষ দুর্ভোগের শিকার হন।