ঘাটের সড়ক দখল করে বালুর ব্যবসা

দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ফেরিঘাট সড়কের দুই পাশে বালুর স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছে লোকজন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে।
প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় গত বছর তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৭ নম্বর ঘাট। ঘাটটি চালু করা হয়েছে চলতি বছরের মে মাসে। নির্মাণের পর থেকে সেখানকার সড়ক ব্যবহার করে বালু বেচাকেনা করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এতে ফেরিতে গাড়ি ওঠানামার সময় চালক, যাত্রী এবং স্থানীয় লোকজনকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে দৌলতদিয়ার ১ ও ২ নম্বর ঘাট পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। পরে সংস্কার করলেও ঘাট দুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বাকি চারটির মধ্যে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ৬ নম্বর ঘাট শুষ্ক মৌসুম (সেপ্টেম্বর) থেকে বন্ধ রয়েছে। গত বছর কর্তৃপক্ষ বাহির চর ছাত্তার মেম্বারপাড়ায় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সংযোগ সড়কসহ নতুন ৭ নম্বর ঘাট নির্মাণ করে। মে মাসের শেষ সপ্তাহে সেটি চালু হয়। ঘাট নির্মাণের পর থেকে সংযোগ সড়ক দখল করে প্রভাবশালীরা বালুর ব্যবসা করছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজিমেন দেখা যায়, ১ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিসির উদ্ধারকারী জাহাজ ‘হামজা’ নোঙর করে রাখা। ৬ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে। ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। ২ নম্বর ঘাটে ফেরি ভেড়ে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ঘাটটি দখল করে কার্গো থেকে সারসহ পণ্য ওঠানামায় ব্যবহার করেন। এ ছাড়া নবনির্মিত ৭ নম্বর ঘাট দিয়ে যানবাহন ওঠানামা করছে। ওই ঘাটের সংযোগ সড়কের দুই পাশজুড়ে রয়েছে বিশাল বালুর স্তূপ। সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা সড়কের জায়গা আটকে বালুর ব্যবসা করছেন। ফেরিঘাট সংযোগ সড়কের অনেকটা আটকে বিশাল বালুর স্তূপ করেছেন দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কাসেম খানসহ কয়েকজন। কাসেম খান দাঁড়িয়ে থেকে ট্রাকে বালু তোলার তত্ত্বাবধান করেছেন। দিনরাত বালু লোড-আনলোড হওয়ায় ফেরিতে গাড়ি ওঠানামায় ব্যাহত হয়। বাতাসে বালু উড়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করে।

গাজীপুর থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকচালক এনামুল হক যাচ্ছিলেন মাগুরা। ফেরি থেকে নামার পর বালুর চাতালের কাছে আসামাত্র বিপরীত দিক থেকে আরেকটি গাড়ি আসায় সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। ফেরি থেকে আনলোড হওয়া গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হয়। চালক এনামুল ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘রাস্তা আটকে যদি বালুর ব্যবসা চলে, তাহলে আমরা চলব কীভাবে?’

বিপরীত দিকে ফেরিতে ওঠার জন্য লম্বা লাইনে থাকা যাত্রীবাহী বাসে বালু প্রবেশ করায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। এক নারী যাত্রী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘এখানে কি দেখার কেউ নেই? রাস্তার দুই পাশজুড়ে এসব বালুর ব্যবসা চলছে। এটা ফেরিঘাটের সড়ক না করে বালু ব্যবসায়ীদের জন্য ছেড়ে দিলেই তো হয়।’

স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একটু বাতাস হলেই বালু ঘরে ঢোকে। খাবারদাবার নষ্ট করে ফেলে। ইউপি সদস্য কাসেম খানকে বলেও লাভ নেই। তিনি নিজেই এ ব্যবসা করছেন।

জানতে চাইলে কাসেম খান বলেন, ‘আমার নিজস্ব জায়গায় ব্যবসা করছি।’ রাস্তাজুড়ে গাড়িতে লোড–আনলোড করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় বালু গেলে দ্রুত সরিয়ে ফেলি। এ ছাড়া আরও অনেকে তো ব্যবসা করছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে আমি কখনো সমস্যা করি না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক খান মামুন বলেন, রাস্তা আটকে বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ব্যবসা করা অপরাধ। এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে গত সোমবার ইউপি সদস্য কাসেম খানকে ডেকে দ্রুত সব বালু অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই ঘাটের উন্নয়নকাজ শুরু হবে। এ জন্য ফেরিঘাট এলাকা থেকে ব্যবসায়ীদের বালু সরিয়ে নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।