ঘুষ না পেয়ে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে না পারায় এক ব্যবসায়ীসহ ২ জনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগের তদন্ত চলছে। শহরের স্টেশন এলাকার ওই ব্যবসায়ী মহির উদ্দিন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে এ অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা হচ্ছেন উপপরিদর্শক (এসআই) উৎপল কুমার সরকার, এসআই আবদুস সালাম, টিএসআই মতিয়ার রহমান ও কনস্টেবল আপেল মাহমুদ।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) ফজল-ই-খুদা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজল-ই-খুদা বলেন, ‘তদন্ত চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে আমার নিজস্ব মতামত এখনো দিইনি।’

এই পাঁচ পুলিশ সদস্য হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান, উপপরিদর্শক (এসআই) উৎপল কুমার সরকার, এসআই আবদুস সালাম, টিএসআই মতিয়ার রহমান ও কনস্টেবল আপেল মাহমুদ।

ব্যবসায়ী মহির উদ্দিন অভিযোগ করেন, তিনি ১৫ বছর ধরে বৈধভাবে যানবাহনের ব্যাটারি ও এর অ্যাসিডের ব্যবসা করে আসছেন। গত ৩ জুন সদর থানার এসআই আবদুস সালাম সাদাপোশাকে দোকানে এসে বলেন, ‘আপনি অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন। আপনার কাছে অতিরিক্ত মাল মজুত আছে। আপনি কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করেন। আপনি ১০ লাখ টাকা দেন। নাহলে আপনাকে থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে মামলা দিয়ে জেলে পাঠাব।’ তখন তিনি (মহির উদ্দিন) বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁর ব্যবসার পুঁজিই দুই লাখ টাকা। করোনার কারণে বিক্রি না হওয়ায় কিছু মাল অতিরিক্ত আছে। বিষয়টি তিনি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে জানিয়ে রেখেছেন। সেখানে তিনি কীভাবে ১০ লাখ টাকা দেবেন। তিনি কোনো টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় বিকেলে তাঁর দোকান থেকে মালামাল জব্দ করে এবং ক্যাশ বাক্সে রাখা ৭০ হাজার টাকাসহ অতীতের বিভিন্ন সময়ে ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব ও এনএসআইয়ের পরিদর্শন প্রতিবেদনের কাগজপত্রসহ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

মহির উদ্দিনের দোকানে অবৈধভাবে অতিরিক্ত অ্যাসিড মজুত ছিল। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। আদালতেই প্রমাণিত হবে, মামলা সত্য না মিথ্যা। মহির উদ্দিন ঘুষ চাওয়ার যে অভিযোগ করেছেন, তা মিথ্যা।
জিয়াউর রহমান, ওসি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা

ব্যবসায়ী মহির উদ্দিনের অভিযোগ, থানার ওসির নির্দেশেই তাঁকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁর বন্ধু সাইফুল ইসলাম ব্যবসাসংশ্লিষ্ট কাগজপত্র থানায় নিয়ে আসে। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে সাইফুলকেও আটক করেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যবসায়ী হিসেবে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইনে মিথ্যা মামলা করে কারাগারে পাঠান। সে সময় তাঁদের মুক্ত করার জন্য জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সুভাষ পাণ্ডে চেষ্টা চালান। কিন্তু তাঁর কাছেও পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, টাকা না দিলে মুক্তি নেই। এরপর দুই মাস কারাভোগ করে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হন তাঁরা। এরপর সদর থানার তখনকার ওসি জিয়াউর রহমানসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার অমানবিক, অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের সুবিচার চেয়ে ২৫ আগস্ট আইজিপি বরাবর আবেদন জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এসআই আবদুস সালাম সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁদের মনমতো জবানবন্দি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

মহির উদ্দিনের এ অভিযোগ সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজল-ই-খুদা দাবি করেন, ‘এমন অভিযোগ আমার কাছে করা হয়নি। আমি সাক্ষীদের বক্তব্য নিজে শুনে স্টেনোগ্রাফারের সাহায্যে লিপিবদ্ধ করে সাক্ষীদের শুনিয়ে স্বাক্ষর নিয়েছি। অফিসের বাইরে কী হয়েছে, তা জানি না।’

সুভাষ পাণ্ডে বলেন, তিনি সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছেন, মহির উদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে পুলিশ কর্মকর্তারা অনেক টাকা চেয়েছিলেন। তিনি বিষয়টি মহির উদ্দিনের আত্মীয়দের বলেন। তাঁরা জানান, এত টাকা তাঁরা দিতে পারবেন না। এরপর মামলা দিয়ে মহির উদ্দিন ও তাঁর বন্ধুকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সদর থানার এসআই উৎপল কুমার সরকার বাদী হয়ে মহির উদ্দিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, মহির উদ্দিনের দোকানে অবৈধভাবে ৭ হাজার ৭০ লিটার নাইট্রিক ও সালফিউরিক অ্যাসিড মজুত ছিল, যার মূল্য ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ টাকা। এর পক্ষে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। অ্যাসিড বিক্রেতা ঢাকার আয়শা ট্রেডার্সের মালিক মঞ্জুর আলীকেও মামলায় আসামি করা হয়।
ওসি জিয়াউর রহমান বলেন, মহির উদ্দিনের দোকানে অবৈধভাবে অতিরিক্ত অ্যাসিড মজুত ছিল। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। আদালতেই প্রমাণিত হবে, মামলা সত্য না মিথ্যা। মহির উদ্দিন ঘুষ চাওয়ার যে অভিযোগ করেছেন, তা মিথ্যা।