ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ

কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেস
ফাইল ছবি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’–এর কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন, সেন্ট মার্টিন–কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিন-চট্টগ্রাম—এই তিন নৌপথে চলাচলকারী সব ধরনের পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া দেড় হাজারের বেশি পর্যটক সেন্ট মার্টিনে বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও কটেজে আছেন।

রবি ও সোমবার ওই তিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রোববার আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে পরদিন সোমবার জাহাজ চলাচল পুনরায় শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শনিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল।

ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য বলা হয়েছে।

ইউএনও পারভেজ চৌধুরী বলেন, গত ১৬ নভেম্বর থেকে প্রথমে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনকে পরীক্ষামূলকভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর পর থেকে ক্রমান্বয়ে সেন্ট মার্টিন-কক্সবাজার, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন ও সেন্ট মার্টিন-চট্টগ্রাম—এই তিন নৌপথে আরও সাত জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ, শহীদ সুকান্ত বাবু, এমভি ফারহানা ক্রুজ, এমভি পরিজাত, গ্রিনলাইন-১ ও কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌপথে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস এবং সেন্ট মার্টিন-চট্টগ্রাম নৌপথে বে-ওয়ান পর্যটক পরিবহন করে আসছিল। বর্তমানে এই তিন নৌপথে আটটি জাহাজ চলাচল করে আসছিল। এর মধ্যে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে ছয়টি এবং সেন্ট মার্টিন-কক্সবাজার নৌপথ ও সেন্ট মার্টিন-চট্টগ্রাম নৌপথে একটি করে জাহাজ চলাচল করে আসছিল।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) টেকনাফ অঞ্চলের পরিদর্শক আমজাদ হোসেন বলেন, কক্সবাজারসহ দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। টেকনাফ থেকে সকালে ছেড়ে যাওয়া ছয়টি জাহাজ সন্ধ্যার দিকে টেকনাফের পথে ছিল। সকালে ছয়টি জাহাজে করে ১ হাজার ৬০৩ জন পর্যটক দ্বীপে বেড়াতে গেলেও পাঁচ শতাধিক পর্যটক স্বেচ্ছায় রাত্রিযাপনের জন্য সেন্ট মার্টিন রয়েছেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে জাহাজ চলাচলে আবার অনুমতি দেওয়া হবে।

পর্যটক জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনের টেকনাফের ব্যবস্থাপক শাহ আলম বলেন, শনিবার সকালে দেড় হাজারের বেশি পর্যটক টেকনাফের দমদমিয়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ছয়টি জাহাজ পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে রওনা দেয়। পরে বেলা তিনটার দিকে জাহাজগুলো সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর দেড় ঘণ্টা পর আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আবহাওয়া গুমোট ছিল। বিকেল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে।

সেন্ট মার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, প্রতিটি হোটেল ও রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ যাতে পর্যটকদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অতিরিক্ত টাকাপয়সা আদায় না করে তার জন্য ইউএনওর নির্দেশে মাইকিং করা হচ্ছে।