ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পটুয়াখালীতে ১৪১ গ্রাম প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আগুনমুখা নদীর জোয়ারের পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। আজ বুধবার পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার বন্যাতলি এলাকায়ছবি: সাইয়ান

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানি উপচে পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়েছে। এতে জেলার গলাচিপা, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ ও কলাপাড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকার ১৪১ প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় ২৩ হাজার ৯৩৮টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানির চাপে বেশ কিছু এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর আম্পানে জেলায় ৩০ কিলোমিটার বাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ২০ কিলোমিটার সংস্কার হয়েছে। বাকি ১০ কিলোমিটার বাঁধ অরক্ষিত আছে। বর্তমানে জেলায় ১ হাজার ৩৪২ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে পটুয়াখালী জেলায় তিন কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গেছে এবং আরও ৪৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বুধবার সকালে জোয়ারের সময় পায়রা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মির্জাগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জোয়ারের পানির চাপে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে এখন পর্যন্ত জেলার কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, দশমিনা ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার ১৪১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে আজ বুধবার সকাল থেকে গলাচিপার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের পাউবোর আগুনমুখা নদীর পাড়ের ৫৫/২ পোল্ডারের বন্যাতলী পয়েন্ট জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে গেছে। বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে সেখানকার চারটি গ্রাম।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আগুনমুখা নদীর জোয়ারের পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে বসতঘর প্লাবিত হয়েছে। আজ বুধবার পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার বন্যাতলি এলাকায়
ছবি: সাইয়ান

গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কলাগাছিয়া সিকদার বাড়িসংলগ্ন এলাকার বাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া গোলাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ–পূর্ব গোলখালী, চর কাজল ইউনিয়নের বড় কাজল, ছোট কাজলসহ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পানপট্টি ইউনিয়নের বোটস্কুল এলাকার বাঁধ এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আগুনমুখার বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ায় বাঁধের অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ইউনিয়নের আগুনমুখা নদীর পাড়ে গুপ্তের হাওলা গ্রামের জেলে আইয়ুব মোল্লা, তাঁর স্ত্রী ঝুমরি বিবি সন্তানদের নিয়ে কোমরপানি ভেঙে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন।
ঝুমুর বেগম বলেন, মঙ্গলবার সকালে জোয়ারে তাঁর ঘরের ভিটা পর্যন্ত পানি উঠেছিল।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানির চাপে বাঁধের বাইরে থাকা বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আজ বুধবার পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সন্ধ্যার জোয়ারে ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করে। সারা রাত ঘরে বসেই আতঙ্ক নিয়ে রাত কাটিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সকালে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে আগুনমুখা নদীর ঢেউয়ের আঘাতে ঘরের ভিটা ধসে যেতে শুরু করে। এরপরই তিনি স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে নৌকায় মালামাল তুলে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।

 গলাচিপা উপজেলার চরকাজল, চর বিশ্বাস, কলাগাছিয়া, চিকনিকান্দি, পানপট্টি, গলাচিপা ইউনিয়নের দুই হাজার মিটার বাঁধের অস্তিত্ব হুমকির মুখে রয়েছে। এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশীষ কুমার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্যসহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাউবোকে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

জেলায় আট উপজেলার ৩০টি পয়েন্টের অন্তত তিন কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। পাউবো থেকে জিও ব্যাগসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে।
মো. সালেহ আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পটুয়াখালী কার্যালয়

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় আট উপজেলার ৩০টি পয়েন্টের অন্তত তিন কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। পাউবো থেকে জিও ব্যাগসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে।